কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আদালতে ‘বড় জয়’ কেজিওরালের

0
114
অরবিন্দ কেজরিওয়াল

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিপুল জয় পেলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতা কার, কেন্দ্র মনোনীত অনির্বাচিত উপরাজ্যপাল নাকি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজ্য সরকারের—এ প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসা করে দিলেন সুপ্রিম কোর্ট।

আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে জানিয়ে দিলেন, আইনশৃঙ্খলা ও জমি ছাড়া বাকি সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা রূপায়ণের অধিকার রাজ্য সরকারের। উপরাজ্যপাল তা মানতে বাধ্য।

এ রায় জানাজানি হওয়ামাত্র দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার করার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। মন্ত্রিপরিষদের জরুরি বৈঠকও ডাকেন।

সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে বলেছেন, সরকার নির্বাচিত হয় জনগণের ইচ্ছা–আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত করার জন্য। রাজ্যে নিযুক্ত আমলাদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও থাকবে নির্বাচিত সরকারের হাতেই।

আমলাশাহি ও সরকারি কর্তারা নির্বাচিত সরকারের নির্দেশমতো পরিচালিত না হলে বা সরকারের কথা না শুনলে মন্ত্রিসভার যৌথ দায়িত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, দিল্লি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। কিন্তু তা হলেও এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অংশ। তাঁর শাসনক্ষমতা থাকবে নির্বাচিত সরকারের হাতেই, কেন্দ্রের হাতে নয়। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য বলেছেন, প্রয়োজনে উপরাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভাকে পরামর্শ দিতে পারেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, গণতন্ত্রে প্রশাসনের মূল ক্ষমতার অধিকারী নির্বাচিত সরকার। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচিত সদস্যদেরই আইন প্রণয়নের অধিকার দিয়েছে। পরিষদীয় সদস্যরাই জনগণের প্রতিনিধি। তাঁদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সেই সরকারের সিদ্ধান্ত মানতে উপরাজ্যপাল বাধ্য। মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ীই তিনি চলবেন।

দিল্লি সরকারের সঙ্গে উপরাজ্যপালের বিরোধ অনেক দিনের। বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন হওয়ার পর থেকে সেই সংঘাত ক্রমেই তীব্রতর হয়ে উঠেছে। সরকারের গৃহীত প্রতিটি সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হচ্ছে উপরাজ্যপালের কাছে। দিল্লি দেশের রাজধানী ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার ধীরে ধীরে উপরাজ্যপালের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে। তা নিয়ে কেজরিওয়াল সরকারের সঙ্গে বিজেপির বিরোধ দিন দিন বেড়ে চলেছে।

এ অবস্থায় দিল্লির প্রশাসনিক অধিকার পেতে দিল্লি সরকার সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের সর্বসম্মত রায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এক বিরাট ধাক্কা।

রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধান দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জমিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। ওই দুই বিষয় ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের মতামতই চূড়ান্ত। দেশের রাষ্ট্রপতি দিল্লির উপরাজ্যপালকে ওই দুই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে গোটা রাজ্য পরিচালনার দায় তাঁর।

সরকারি আমলা ও কর্তা প্রসঙ্গে রায়ে বলা হয়, গণতন্ত্রে সরকারি কর্তা ও কর্মীদের ওপর অধিকার না থাকলে বা তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা না থাকলে জনগণ ও বিধানসভার প্রতি নির্বাচিত সরকারের কর্তব্য পালিত হবে না। আমলারা যদি মনে করেন, তাঁরা সরকারের আওতার বাইরে, তাহলে তাঁদের দায়বদ্ধতাও থাকবে না।

সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই আম আদমি পার্টি তাকে ‘বিপুল জয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইট করে সুপ্রিম কোর্টকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এই রায় গণতন্ত্রের জয়। ফলে রাজধানী দিল্লির উন্নয়নের ধারা গতিপ্রাপ্ত হবে।’

দলের পক্ষ থেকে টুইট করে বলা হয়, সরকারি কর্তাদের বদলি ও নিযুক্তির ক্ষমতা থাকবে সরকারের হাতে। সরকারি নির্দেশ মেনে আমলারা কাজ করতে বাধ্য হবেন। দিল্লির জনগণের সেবায় কাজ করতে তাঁদের ঠেকাতে পারবেন না উপরাজ্যপাল। দলের মন্ত্রী ও রাজ্যসভা সদস্য রাঘব চাড্ডা বলেন, ‘এ এক ঐতিহাসিক রায় ও কঠোর বার্তা।’ টুইট করে তিনি বলেন, ‘সত্যের জয় হলো।

জিতল দিল্লি। রায় স্পষ্ট করে দিল, সরকারি কর্তারা নির্বাচিত সরকারের অধীন দিল্লির জনগণের সেবা করবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের চাপিয়ে দেওয়া উপরাজ্যপাল নামধারী অনির্বাচিত কারও মারফত নয়।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.