গর্ভাবস্থায় উচ্চমাত্রার জ্বর

0
57

জ্বর হচ্ছে রোগের বহিঃপ্রকাশ। গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে বেশি মাত্রায় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এখানে শুধু মা নন, অনাগত সন্তানেরও স্বাস্থ্যের বিষয় থাকে। গর্ভাবস্থায় উচ্চমাত্রার জ্বর মা ও সন্তান দু’জনকেই ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে মায়ের শরীর দ্রুতই খারাপ হয়। জ্বরের প্রভাব অনাগত সন্তানের ওপরও পড়তে পারে।
গর্ভাবস্থায় নানা কারণে জ্বর হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারী মূত্রাশয়ে প্রদাহ, মৌসুমি ফ্লু কিংবা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন।

সাধারণত ১০০ থেকে ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর থাকলে সেটিকে সাধারণ জ্বর বলা হয়। কিন্তু জ্বর যদি ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি হয়, তবে তা উচ্চমাত্রার। জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে যদি পাতলা পায়খানা, মাথা ঘোরা, গায়ে ব্যথা, পায়ে ব্যথা হয় তাহলে সাবধান হতে হবে। কারও নাক বা দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া, কারও আবার গায়ে র‌্যাশ ওঠার সমস্যাও হয়।
জ্বর হলেই গর্ভাবস্থায় সব ওষুধ খাওয়া যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ খেলে তা গুরুতর হতে পারে; অ্যান্টিবায়োটিক তো অবশ্যই নয়। তবে রোগীকে পরীক্ষা করে ডাক্তার যদি মনে করেন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে, সে ক্ষেত্রে ঠিক আছে। তবে ডেঙ্গু হোক বা যে কোনো জ্বর, অন্তঃসত্ত্বাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডেঙ্গু পরীক্ষায় এনএস-১ যদি নেগেটিভও হয়, তাহলেও অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের লক্ষণগুলো খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় ডেঙ্গু নেগেটিভ আসে। এরপরও সতর্ক থাকতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার চতুর্থ থেকে সপ্তম দিন পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়। এরপরই প্লাটিলেট কমতে থাকে, রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা দেয়। প্লাটিলেট কমে গেলে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের ইন্টারনাল হেমারেজ হতে পারে, অনাগত সন্তান পেটে মারা যেতে পারে। অনেক সময় প্রি-ম্যাচিউর ডেলিভারি হতে পারে। এ সময় ডেলিভারি হলে বাচ্চারও ডেঙ্গু হতে পারে।

তাই জ্বর হলে ঘরে বসে থাকা যাবে না। রোগীর জ্বর, উচ্চ রক্তচাপ মাপতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার, যেমন– স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের রস, স্যালাইন খেতে হবে। পাশাপাশি প্রোটিনজাতীয় খাবার, সবুজ শাকসবজি, মাছ, মুরগি খেতে হবে। ইমিউনিটি ঠিক থাকলে রোগী জ্বরে খুব বেশি কাবু হবে না। এ সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
ডেঙ্গু থেকে সাবধান থাকতে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের দিনের বেলায়ও মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে, ফুলস্লিভ জামা পরতে হবে, মশানাশক ব্যবহার করতে হবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক (গাইনি ও অবস), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.