ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলা ডাচ তারকা ডেনজেল ডামফ্রিস ম্যাচের ৮১ মিনিটে গোল করতেই মাথায় হাত দেন যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বারহল্টার। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে উপস্থিত মার্কিন দর্শকদেরও হাত তখন মাথায়। তারাও বুঝতে পারলেন লড়াইটা সেখানেই শেষ। শুরুতে ২ গোলে পিছিয়ে পড়লেও চমকে ভরপুর বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল পাশার দান উল্টে দিতে।
৭৬ মিনিটে ব্যবধান কমানোর পর সেই সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়। তবে ডামফ্রিসের গোলটিতে শেষ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা। যে কারণে ২০০২ সালের পর আবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ননটা অধরাই থেকে গেছে তাদের। অন্য দিকে ৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরে দারুণ জয়ে বিশ্বকাপের শেষ আট নিশ্চিত করেছে নেদারল্যান্ডস।
দুর্দান্ত এক আক্রমণে ডামফ্রিসের কাছ থেকে ডি–বক্সের ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন মেম্ফিস ডিপাই। আক্রমণ তৈরি থেকে বল জালে জাড়নো পর্যন্ত ডাচ খেলোয়াড়েরা ২০ টি পাস সম্পন্ন করেছেন। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ থেকে হিসাব রাখার পর এটিই বিশ্বকাপে ডাচদের সবচেয়ে বেশি পাসের গোল।
পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি যুক্তরাষ্ট্র। তারা চেষ্টা করে ডাচ রক্ষণকে চাপ ফেলে সমতায় ফিরতে। তবে পাল্টা আক্রমণে নেদারল্যান্ডসও বের করে নিচ্ছিল ফাঁকা জায়গা। ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল তাদের সামনেও। ১৭ মিনিটে ডেলি ব্লিন্ডের প্রচেষ্টা পোস্টের ওপর দিয়ে যায়। ২১ মিনিটে আরও একবার গোলের সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় তারা। এ সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও ধীরে ধীরে নিয়ে নেয় কমলা জার্সির দলটি।
যুক্তরাষ্ট্র মাঝ মাঠের দখল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও, নিজেদের রক্ষণকে একেবারেই ভালোভাবে সামলাতে পারছিল না তারা। ডিপাই–গাকপো–ব্লিন্ডদের প্রতিটি প্রচেষ্টায় কেঁপে কেঁপে ওঠছিল মার্কিনিদের রক্ষণ–দুর্গ।
৪৩ মিনিটে আক্রমণে গিয়ে ডি–বক্সের একটু বাইরে থেকে নেওয়া টিমথি উইয়াহর শট ঠেকিয়ে দেন ডাচ গোলরক্ষক আন্দ্রিস নোপের্ট। তবে যুক্তরাষ্ট্র না পারলেও ভুল করেনি নেদারল্যান্ডস। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ডামফ্রিসের আরেকটি দুর্দান্ত অ্যাসিস্টে গোল করে ডাচদের জোড়া লিড এনে দেন ব্লিন্ড।
বিরতির পর ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। আগ্রাসী ফুটবলে ডাচ রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করছিল তারা। ৪৮ মিনিটে টিম রিমের দারুণ একটি প্রচেষ্টা গোল লাইন থেকে ফেরান কোডি গাপকো।
পাল্টা আক্রমণে গিয়ে তৃতীয় গোলটি প্রায় করেই ফেলেছিল নেদারল্যান্ডস। যদিও ডাচদের সেই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। একটু পর ডি–বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে মার্কিন মিডফিল্ডার ওয়েস্টন ম্যাকেনি শট অল্পের জন্য পোস্ট উঁচিয়ে যায়। গোল না পেলেও একের পর আক্রমণে ডাচ রক্ষণকে অস্থির করে তুলছিল যুক্তরাষ্ট্র।
নেদারল্যান্ডসের প্রচেষ্টা ছিল রক্ষণ সমালে আক্রমণে যাওয়ার। তেমনই এক আক্রমণ থেকে ৬১ মিনিটে ডিপাইয়ের প্রচেষ্টা হাত ছুঁয়ে বিপদ মুক্ত করেন মার্কিন গোলরক্ষক ম্যাট টার্নার।
৭১ মিনিটে অল্পের জন্য ব্যবধান কমাতে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে একের পর চাপ তৈরি করে ৭৬ মিনিটে পুলিসিকের পাসে হাজি রাইটের পায়ে লেগে বল জালে জড়ালে এক গোল শোধ করে মার্কিনিরা। আরেক গোল করলেই যখন লড়াইয়ে ফেরার সুযোগ তাই দুই উইং দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বারবার ডাচ রক্ষণের পরীক্ষা নিতে শুরু করে তারা।
তবে ৮১ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে সুযোগ পেয়ে দুর্দান্ত এক ভলিতে ডাচদের ৩–১ ব্যবধানে এগিয়ে দিয়ে ম্যাচ একরকম শেষই করেন ডামফ্রিস। ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন এই ডাচ তারকা।
প্রথম দুটি গোলেও অ্যাসিস্ট ছিল তাঁর। এরপর দুই দলেই পেয়েছিল গোলের সুযোগ। তবে কেউ আর জালের দেখা না পেলে কমলা উচ্ছ্বাসে ভেসে শেষ আটে চলে যায় নেদারল্যান্ডস।