কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের দরিয়ারদীঘি বনাঞ্চলে ৫০-৬০ বছর বয়সী একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে হাতিটি বাঁশ কোড়ল (বাঁশের চারা) খেয়ে অসুস্থ হয়ে বনাঞ্চলের একটি পাহাড়ি টিলা থেকে নিচে পড়ে যায়। বেলা পৌনে দুইটার দিকে মৃত্যু হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সরওয়ার আলম। তিনি বলেন, প্রায় ৬০ বছর বয়সী বন্য হাতিটি অসুস্থ হয়েই মারা গেছে। দুপুরে লোকজন বনাঞ্চলে হাতিটিকে টিলা থেকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশের জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল দেন। সেখান থেকে হাতি অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরটি তাঁকে (ডিএফও) জানানো হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘটনাস্থলে ভেটেরিনারি সার্জনসহ বনকর্মীদের পাঠানো হয়। তাঁরা অসুস্থ হাতির চিকিৎসাও করেন; কিন্তু বেলা পৌনে দুইটার দিকে পুরুষ হাতিটির মৃত্যু হয়।
স্থানীয় লোকজনের উদ্ধৃতি দিয়ে ডিএফও সরওয়ার আলম বলেন, বন্য হাতিটি বনাঞ্চল থেকে বাঁশ কোড়ল খেয়েছিল। এর পর হাতিটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাঁশ কোড়লে ক্ষতিকর কিছু ছিল কি না, তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা যাবে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত হাতিটি বনাঞ্চলের মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে। দরিয়ারদীঘি বনাঞ্চলে বর্তমানে ৬৫টির মতো বন্য হাতির বিচরণ রয়েছে।
স্থানীয় রামুর রাজারকুল বনের রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, স্থানীয় লোকজন তাঁকে জানিয়েছেন বন্য হাতিটি সকালে বনাঞ্চলের বাঁশবাগানে ঢুকে বাঁশ কোড়ল খেতে থাকে। কিছুক্ষণ পর হাতিটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর স্থানীয় এক ব্যক্তি পুলিশের জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে হাতিটি অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর জানান। স্থানীয় লোকজন এবং পাহাড়ি অদিবাসীদের মধ্যে বাঁশ কোড়ল সবজি হিসেবে খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
ঘটনার পর অসুস্থ হাতি দেখতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। অনেকে হাতিটির ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। মহাবিপন্ন এশিয়ান জাতের হাতির মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’–এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ। তিনি বলেন, বাঁশ কোড়ল খেয়ে হাতিটি অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার কথা বলা হলেও বাঁশ কোড়লের সঙ্গে ক্ষতিকর কিছু মেশানো হয়েছিল কি না, তা তদন্ত করা দরকার।
গত চার বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের বনাঞ্চলে অন্তত ১৬টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বেশির ভাগ হাতির মৃত্যু হয়েছিল গুলি ও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে। স্থানীয় লোকজন জানান, ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট রামু উপজেলার ধোয়াপালং গ্রামে ধানখেতে বিদ্যুতের শক দিয়ে হত্যা করা হয় একটি বন্য হাতি। ঘটনা ধামাচাপা দিতে তখন হাতিটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে টুকরা টুকরা করে মাটিকে পুঁতে ফেলা হয়। স্থানীয় কাঠুরেরা হাতির শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা ও পা মাটিচাপা দিতে দেখে বনকর্মী ও পুলিশকে খবর দিলে ঘটনা ফাঁস হয়।