এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা দিয়েই কি ভূপাতিত প্রিগোশিনের উড়োজাহাজ

0
110
উড়োজাহাজটি সোজা মাটির দিকে নেমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিস্ফোরণের কারণে এভাবে সোজা নিচে নামে উড়োজাহাজটি, ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী রুশ প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের উড়োজাহাজ কীভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা–কল্পনা। মস্কো থেকে নিজের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার মাঝপথে তাঁর ব্যক্তিগত উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় পড়েছে, নাকি উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে, সে প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠেছে।

গত বুধবার মস্কো থেকে ৩৫০ কিলোমিটার উত্তরে প্রিগোশিনের উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় উড়োজাহাজে থাকা ১০ আরোহীর সবাই নিহত হন। তবে রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় ৬২ বছর বয়সী প্রিগোশিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

একটি পাখা আগেই উড়োজাহাজের মূল অবকাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। সেই পাখা পৃথক একটি স্থানে পড়ে থাকতে দেখা যায়
একটি পাখা আগেই উড়োজাহাজের মূল অবকাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। সেই পাখা পৃথক একটি স্থানে পড়ে থাকতে দেখা যায়, ছবি: রয়টার্স

জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব ব্রেমেনের গবেষক নিকোলাই মিত্রখিন বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়টি গভীরভাবে নজরদারি করবে ক্রেমলিন। কারণ, প্রিগোশিনের মৃত্যুতে ক্রেমলিন সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। প্রিগোশিনকে বহনকারী উড়োজাহাজ ‘বিধ্বস্ত’ হওয়া নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।

মিত্রখিন বলেন, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিবেচনায় নিলে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে বলে মনে হবে। এটা বিশ্বাস করাও সহজ। কারণ, এটা রুশ কর্তৃপক্ষের জন্য সুবিধাজনক, যারা সব সময় দোষ চাপিয়ে দিতে পারে একজন লেফটেন্যান্ট বা মেজরের ওপর, যাঁরা এই ভুল করেছেন।

উড়োজাহাজটি যখন বিধ্বস্ত হয়, তখন কেউ একজন ব্যক্তিগত মুঠোফোনে সে দৃশ্য ধারণ করেন। এতে দেখা যায়, জ্বলন্ত অবস্থায় প্রিগোশিনের ‘এমব্রেয়ার লিগ্যাসি’ নামের উড়োজাহাজটি মাঝ আকাশ থেকে নিচের দিকে নামছে। এদিক–সেদিকে যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে একটি মাত্র ইঞ্জিন কাজ করছে।

মাঝ আকাশেই আগুন লাগে। এ অবস্থায় বিধ্বস্ত হওয়ার পর জ্বলছে উড়োজাহাজ
মাঝ আকাশেই আগুন লাগে। এ অবস্থায় বিধ্বস্ত হওয়ার পর জ্বলছে উড়োজাহাজ, ছবি: রয়টার্স

উড়োজাহাজের পেছনে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছিল। তাতে মনে হচ্ছিল না, উড়োজাহাজ থেকে এই ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। এর পেছনের অংশ ও একটি পাখা উড়োজাহাজের মূল কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন। এভাবে পড়তে দেখে ধারণা করা যায়, বিস্ফোরণের কারণেই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে।

আনাড়ি হাতে তোলা এ রকম আরও একটি ভিডিও চিত্রেও উড়োজাহাজটি সরাসরি নিচে নামতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঘটনার সময় তাঁরা দুবার বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। সাধারণত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার বিষয়টি নিশ্চিত হতেই আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দুবার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে থাকেন।

তবে এখানেও একটা কিন্তু আছে। রাশিয়ায় বেসামরিক বিমান চলাচলে নজর রাখা একটি সংস্থার এক সূত্র স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে বলেছে, উড়োজাহাজটিকে ‘উড়িয়ে দেওয়া’ হয়েছে। এদিকে উড়োজাহাজ চলাচল সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট রাডার ২৪ বলছে, ব্রাজিলে তৈরি উড়োজাহাজটি সাড়ে ৮ হাজার মিটার, অর্থাৎ ২৮ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠেছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো উড়োজাহাজ যখন এত উচ্চতায় উড়তে থাকে, তখন তাতে আঘাত করা সাধারণ কোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় সম্ভব নয়। অল্প কিছু আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার পক্ষেই তা সম্ভব। রাশিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেল ভিসিএইচকে–ওজিপিইউয়ে দাবি করা হয়েছে, দুটি এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েই উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়। তবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.