এখনও উপেক্ষিত অনেক নির্দেশনা

সংবিধান দিবস আজ

0
99

বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ন দিবস আজ শনিবার। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর প্রণীত হয় এই সংবিধান। আর একই বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয় এটি। গত ৫১ বছরে নানা প্রেক্ষাপটে ১৬ বার সংশোধন হয়েছে সংবিধান। এর মধ্য দিয়ে খর্ব করা হয়েছে বাহাত্তরের মূল সংবিধানের চার মূলনীতিও।

সংবিধানে উল্লেখ থাকার পরও উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়ন, ন্যায়পাল নিয়োগে আইন প্রণয়ন ও নিয়োগ, মৌলিক অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে নিম্ন আদালতকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদানসহ নানা বিষয়ে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের বিষয়গুলো প্রলম্বিত হচ্ছে।

সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সংবিধানের ৯৫(৩) অনুচ্ছেদে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য যোগ্যতর ব্যক্তি বাছাইয়ে আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ৩ জুলাই সংসদ ও ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট আইন কমিশন থেকেও বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের একাধিক রায়েও বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়নের জন্য কয়েক দফা নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এরপরও আইন প্রণীত হয়নি।

অন্যদিকে সংবিধানের ৪৪(২) বর্ণিত নিম্ন আদালতকে সংবিধান ও মৌলিক অধিকার প্রশ্নে শুনানির এখতিয়ার প্রদান, ৭৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ন্যায়পাল নিয়োগ, ১১৮(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগসহ বেশ কিছু আলোচিত বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা থাকলেও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সরকার। অথচ নানা প্রেক্ষাপটে এ পর্যন্ত ১৬ বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, এর মধ্যে পাঁচটি সংশোধনী আবার উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিলও হয়েছে। এরপরও বাহাত্তরে যে চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল, সেই মূলনীতি পুনর্বহাল হয়নি। একই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও  রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সন্নিবেশ ঘটেছে।

বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্‌দীন মালিক বলেন, সংবিধানে উল্লেখ থাকার পরও উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ ও নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নানা বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে না। অথচ সরকার চাইলেই তা করা সম্ভব। তিনি বলেন, ন্যায়পাল আইনও করা দরকার। তবে আশঙ্কা হয় বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মতো ন্যায়পাল নিয়োগও সম্ভবত সহসা হবে না। অথবা হলেও নখদন্তবিহীন ন্যায়পাল নিয়োগের একটি আইন হলেও হতে পারে। তাই সঠিক অর্থে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ, বিচারপতি ও ন্যায়পাল নিয়োগে আইন না হলে আমাদের গণতন্ত্র ধুঁকবে আরও অনেক বছর।

বাহাত্তরের মূল সংবিধান পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, অবিকৃত ১৯৭২ সালের সংবিধান জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া, সমাজে নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। এর দায় শুধু সরকারের নয়, জনগণেরও। জনগণকে সচেতনভাবে প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে যাতে যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে সংবিধান কার্যকর থাকে এবং পরিচালিত হয় তার দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনা যায়।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানে কিছুটা বৈপরীত্য রয়েছে। বিশেষ করে একই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সন্নিবেশ যে যৌক্তিক নয়, তা উচ্চ আদালতের রায়েও উঠে এসেছে। এ বিষয় সংশোধনের জন্য সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন।

সংবিধানের বর্ণিত আইন প্রণয়নের বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নজরে নেওয়া হলে তিনি বলেন, বিচারক নিয়োগ-সংক্রান্ত আইনসহ সংবিধানে যেসব বিষয় বলা হয়েছে, তার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা কাজ করছি। গত বছরই আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগে আইন করেছি।

বাহাত্তরের মূল সংবিধানের মূলনীতি বহাল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু জিনিস আছে যেটা হয়তো বাস্তবতার নিরিখে চিন্তাভাবনা থাকলেও সেখানে ফিরে যাওয়া হয়নি। ইনশাআল্লাহ সেখানে ফেরার সম্ভাবনা আছে।’

দিবসের কর্মসূচি

সংবিধান দিবস উপলক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর এক হোটেলে সকাল ১০টায় সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে বিকেল সাড়ে ৩টায় সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন মালদ্বীপের প্রধান বিচারপতি উজ. আহমেদ মুথাসিম আদনান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.