কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে মাসের শেষে একটি লাইট ও একটি ফ্যানে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৫৪ হাজার টাকা। উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের ছোট কুষ্টারী গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক বাসিন্দার ঘরে এই অস্বাভাবিক বিল এসেছে। এত টাকার বিদ্যুৎ বিল দেখে ঘরটির বাসিন্দা বিধবা ওই নারী দিশাহারা হয়ে পড়েন। এ ঘটনায় তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছেও মৌখিক অভিযোগ দেন। পরে গণমাধ্যমকর্মীরা পল্লীবিদ্যুৎ কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে এই সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ছোট কুষ্টারী আশ্রয়ণ প্রকল্পে মজিরন বেগমসহ ছয়টি পরিবার বসবাস করেন। ভূমিহীন বিধবা মজিরন বেগম তাঁর ঘরে একা বসবাস করেন। তিনি ঘরে একটি লাইট ও একটি ফ্যান ব্যবহার করেন। চলতি মাসের বিদ্যুৎ বিলের কাগজে তাঁর ঘরের বিদ্যুতের বিল আসে ৫৪ হাজার ২৩৭ টাকা। মজিরন বেগমের বিদ্যুৎ বিলের কাগজে দেখা যায়, বিদ্যুৎ মিটারের বর্তমান রিডিং ৬ হাজার ৯৪৫ এবং পূর্ববর্তী মাসের রিডিং ২ হাজার ৮৭৭। চলতি মাসে মজিরন বেগমের ব্যবহৃত ইউনিটের পরিমাণ ৪ হাজার ৬৮ দেখানো হয়েছে, যার মূল্য ৫৪ হাজার ২৩৭ টাকা। এই টাকা চলতি মাসের ২৭ তারিখের মধ্যে জরিমানা ছাড়া প্রদান করতে বলা হয়।
মজিরন বেগম গতকাল সোমবার বলেন, ‘আমার ঘরে মাত্র একটা লাইট আর একটা ফ্যান চলে। এ ছাড়া সন্ধ্যার সময় বারান্দায় একটা লাইট জ্বলে। প্রতি মাসে আমার বিদ্যুৎ বিল ২৩০ টাকা ও তার কাছাকাছি থাকে। কিন্তু চলতি মাসের বিদ্যুৎ বিল ৫৪ হাজার টাকা এসেছে। আমি কোনো উপায় না দেখে উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানাইছি। চেয়ারম্যান বলেছেন তিনি বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে কথা বলবেন।’
চিলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রুকুনুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত ওই নারী আমাকে তাঁর বাসার বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে বলেছেন। আমি সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএমকে বিষয়টি দেখে সমাধানের জন্য বলেছি। আশা করি দ্রুত সমাধান হবে। একটি ফ্যান আর একটি লাইটের তো এত বিল হওয়ার কথা নয়। পল্লীবিদ্যুতের অনেক কাজই এ রকম জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলানোর মতো।’
আজ সকাল ১০টার দিকে মজিরন বেগম পল্লীবিদ্যুতের কার্যালয়ে যান। এ সময় তাঁকে নতুন করে বিদ্যুতের একটি বিল দেওয়া হয়। মজিরন বেগম বলেন, ‘বিদ্যুতের নতুন বিল অনুযায়ী আমি ২৬১ টাকা পরিশোধ করি। আজ তারা আমার বাসার পুরোনো মিটার খুলে নিয়ে নতুন মিটার বসিয়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির চিলমারী জোনাল কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মিটারটি অনেক উঁচুতে ছিল যে কারণে আমাদের অফিসের কর্মচারীরা অতীতে রিডিং নিতে পারেননি। তাঁরা একটি লাইট ও একটি ফ্যানের জন্য ২৩০ টাকা পরিমাণে বিল করে আসছিলেন। গত মাসে তাঁরা ওই নারীকে মিটার নিচে নামানোর পরামর্শ দেন। ওই নারী স্থানীয় বিদ্যুৎ–মিস্ত্রিকে দিয়ে মিটার নিচে নামিয়েছিলেন। ওই সময়ে ঝাঁকুনি খেয়ে মিটারের রিডিং পরিবর্তন হয়ে বেড়ে যায়। ফলে এবারে হঠাৎ করেই এত পরিমাণে রিডিং ও বিল এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পূর্ববর্তী মাসের বিলের সঙ্গে মিল রেখে এ মাসে ২৬১ টাকা বিদ্যুৎ বিল ধরে কাগজ তৈরি করে তাঁর কাছে বিল নিয়েছি। এ ছাড়া ওই নারীকে ডেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর বাসায় নতুন একটি মিটার বসিয়ে দিয়েছি। এখন থেকে তিনি নতুন মিটারের রিডিং অনুযায়ী বিল দেবেন।’