এক টানে ১৭০ মণ ইলিশ, দাম অর্ধকোটি টাকা

0
141
জেলে আবুল খায়েরের জালে এসব ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য বন্দর থেকে তোলা। মাছগুলো বিক্রি হয় ৫৪ লাখ টাকায়

সাগরে ইলিশ ধরতে যাওয়ার জন্য হাতে কোনো টাকা ছিল না পটুয়াখালীর কুয়াকাটা–সংলগ্ন রামগতি এলাকার জেলে আবুল খায়েরের। স্থানীয় মহাজনের কাছে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে আট লাখ টাকা ধার নেন। সেই টাকা নিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ সাগরে ট্রলার ভাসান। জাল ফেলার পর প্রথম টানেই ভাগ্য ঘুরে গেছে তাঁর। এক টানে ইলিশ পেয়েছেন ১৭০ মণ, যা বিক্রি করে পেয়েছেন ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, ওই উপকূলে এযাবৎকালের মধ্যে কোনো জেলের জালে ধরা পড়া এটা হলো সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মাছ। গত শনিবার বিকেলে জেলে আবুল খায়ের ইলিশগুলো উপজেলার অন্যতম বড় মাছের মোকাম মহিপুর মৎস্য বন্দরের ‘মিঠুন ফিশ’ নামের একটি আড়তে বিক্রি করেছেন।

আবুল খায়েরের ট্রলারটির নাম ‘এফবি রিভারমেট’। এই ট্রলারটিতে ছিলেন স্থানীয় ইউনুস মাঝি। তিনি জানান, ইলিশ ধরার জন্য ২০ আগস্ট রামগতি থেকে সাগরে ট্রলার ভাসান তাঁরা। ২৩ আগস্ট সকালে জাল ফেলেন। এদিন বিকেলে জাল তোলেন, এ সময় প্রচুর ইলিশ মাছ পান। এরপর তাঁরা মহিপুর মৎস্য বন্দরের উদ্দেশে রওনা করেন। গত শনিবার দুপুরে তাঁরা মহিপুরে পৌঁছান।

ট্রলারমালিক আবুল খায়েরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি মাছের ব্যবসা করতে গিয়ে ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন। এবার সাগরে নামার মতো কোনো অর্থ ছিল না তাঁর। যে কারণে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে আট লাখ টাকা ধার নিয়ে জ্বালানি ও প্রয়োজনীয় খাবার কিনে সাগরে নামেন। ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে ছিলেন দুশ্চিন্তার মধ্যে।

জালের প্রথম টানেই প্রচুরসংখ্যক ইলিশ পাওয়ায় আবুল খায়ের এখন দারুণ খুশি। তিনি বলেন, ‘মানুষ কত অসহায় হইলে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রাখে বলেন? আই এক্কেবারে শেষ হই গেছিলাম। আল্লাহ আর দিকে মুখ হিরাই চাইছে। অন আর স্ত্রীর বন্ধক রাখা গয়না হিয়ান ছাড়াইমু। ঘরখান ভাঙি আছে। হিয়ান মেরামত করমু। বাকি টেয়াগুন অন্য কাজে খাডাইমু।’

জেলে আবুল খায়েরের জালে এসব ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। আড়তে এনে আকারভেদে আলাদা করে রাখা হচ্ছে মাছগুলো। পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য বন্দরে শনিবার দুপুরে
জেলে আবুল খায়েরের জালে এসব ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। আড়তে এনে আকারভেদে আলাদা করে রাখা হচ্ছে মাছগুলো। পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য বন্দরে শনিবার দুপুরে

আবুল খায়েরের সব কটি ইলিশই কিনেছেন মহিপুর মৎস্য বন্দরের মিঠুন ফিশের মালিক মিঠুন দাস। তিনি জানান, জেলে আবুল খায়েরের জালে বিভিন্ন আকারের ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। এর মধ্য ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ রয়েছে ৫৭ মণ। ৪২ হাজার টাকা দরে এর দাম হয়েছে ২৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬৮ মণ। ৩৩ হাজার টাকা দরে দাম হয়েছে ২২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। তিনটিতে এক কেজি হয়, এমন আকারের ইলিশ ধরা পড়েছে ৯ মণ। ২৭ হাজার টাকা দরে এই ৯ মণের দাম হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ১ কেজি থেকে ১ হাজার ২০০ গ্রামের মধ্যে ইলিশ ধরা পড়েছে ১ মণ। এর দাম হয়েছে ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। ধরা পড়া ইলিশগুলো ট্রলারে সঠিকভাবে সুরক্ষা করতে না পারায় ৫০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের পাম (পচা) ইলিশ হয়েছে ৩৫ মণ। ১৫ হাজার টাকা দরে এর দাম হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

পটুয়াখালী উপকূলে এবার দেরিতে ইলিশ ধরা পড়ছে। এর কারণ জানালেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার দেরিতে ইলিশ আহরণ শুরু হয়েছে। তা ছাড়া দক্ষিণাঞ্চল, বিশেষ করে ইলিশের বড় অবতরণ কেন্দ্র মহিপুর-আলিপুরসংলগ্ন কুয়াকাটা থেকে ঢালচর পর্যন্ত সাগর সীমানায় মহীসোপান দীর্ঘ এবং পলিজ। প্রতিনিয়ত পলি পড়ে সাগরের সংযোগ চ্যানেল প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে, পরিবর্তিত চ্যানেল ইলিশের চিনে উঠতে সময় লাগছে।

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম আরও বলেন, সাগরের পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ প্রতিরোধে জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্লাস্টিক ও মাইক্রো প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে জেলেদের নিয়মিতভাবে সজাগ করে তোলার কাজ করছে মৎস্য অধিদপ্তর। মোহনা ও সাগরদূষণ প্রতিরোধ করা গেলে জাতীয় ইলিশের উৎপাদনের এমন ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.