একদিন স্বপ্নের দিন…।
২০ এপ্রিল দিনটা টপ প্রাইসের জন্য ছিল এমনই। ৪৫ রানে দলের ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নামলেন, এরপর করলেন সেঞ্চুরি। সে ইনিংসও খেললেন ১০০-এর ওপর স্ট্রাইক রেটে। এরপর বোলিংয়ে নেমে প্রতিপক্ষ দলের তিন মূল ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে করে ফেললেন হ্যাটট্রিক। এর সবই হলো এক দিনে। গ্লস্টারশায়ারের প্রাইসের দিনটাকে তো স্বপ্নের দিনই বলতে হবে!
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিক করা মাত্র ১৫তম ক্রিকেটার হয়ে গেছেন প্রাইস। সব মিলিয়ে ১৫তম ক্রিকেটার হলেও প্রাইসের হ্যাটট্রিক ও সেঞ্চুরিটি অবশ্য ১৭তম ঘটনা। গ্লস্টারশায়ারের হয়েই মাইক প্রক্টর এ কীর্তি গড়েছিলেন দুবার—১৯৭২ সালে এসেক্সের পর ১৯৭৯ সালে লেস্টারশায়ারের বিপক্ষে।
দুবার এমন কীর্তি আছে বাংলাদেশের সোহাগ গাজীরও। ২০১২-১৩ মৌসুমে খুলনার বিপক্ষে বরিশালের হয়ে একই ম্যাচে হ্যাটট্রিক ও সেঞ্চুরির পর সোহাগ সেটির পুনরাবৃত্তি করেন পরের মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। টেস্টে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিক করা একমাত্র ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত সোহাগই।
প্রাইসের কীর্তিটি ইংল্যান্ডের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ডিভিশন টু-তে উস্টারশায়ারের বিপক্ষে। নিউ রোডে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা গ্লস্টারশায়ার বেন গিবন ও জো লিচের তোপে পড়ে ৮ রানেই হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। একসময় সেটি পরিণত হয় ৪৫ রানে ৭ উইকেটে।
২৩ বছর বয়সী প্রাইস নামেন এরপর। জাফর গোহার ও মার্চেন্ট ডি ল্যাঙ্গের সঙ্গে পরের দুই উইকেট জুটিতে প্রাইস যোগ করেন আরও ১০৫ রান। শেষ ব্যাটসম্যান অজিত ডেল যখন ক্রিজে আসেন, প্রাইসের রান তখন ছিল ৫২। তবে সেঞ্চুরি পেতে কোনো সমস্যা হয়নি তাঁর। ৯৩ বলেই মাইলফলক পূর্ণ করে ফেলেন তিনি।
২০২০ সালে এই উস্টারের বিপক্ষেই প্রথম শ্রেণির অভিষেক হয়েছিল অক্সফোর্ডের তরুণের, অভিষেকে দুই ইনিংসেই আউট হয়েছিলেন কোনো রান না করেই। সেই উস্টারের বিপক্ষেই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটিও পেয়ে গেলেন।
অবশ্য তিনি আউট হন একটু দুর্ভাগ্যজনকভাবেই। ব্যাটিং সঙ্গী ডেলের স্ট্রেইট ড্রাইভ বোলারের হাত ছুঁয়ে সোজা গিয়ে ভাঙে ননস্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প, সে সময় ক্রিজের বাইরেই ছিলেন প্রাইস। ৯৮ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ১২টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা। প্রাইসের ইনিংসে ভর করে গ্লস্টারশায়ার তোলে ২৩১ রান।
জবাবে প্রথম ইনিংসে উস্টারশায়ার শুরুটা ভালোই করেছিলেন ওপেনার জেক লিবি ও এড পোলক। ১৪.৩ ওভারেই দুজন মিলে তুলে ফেলেন ৫০ রান। তবে এরপরই ৮ বলের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে উস্টার, সেই ধ্বংসযজ্ঞের মূলে ছিলেন প্রাইস!
ডেলের বলে জেক লিবি এলবিডব্লু হওয়ার পর প্রাইসের করা ১৮তম ওভারে একে একে ফেরেন আজহার আলী, জেক হেইনস ও উস্টার অধিনায়ক ব্রেট ডি’অলিভেইরা। তিনজনই ক্যাচ দেন উইকেটকিপার জেমস ব্রেসির হাতে। ৫৮ রানে ১ উইকেট থেকে উস্টার পরিণত হয় ৫৯ রানে ৪ উইকেটে। প্রাইস পরে ফেরান ওপেনার পোলককেও। উস্টার দিন শেষ করে ৭ উইকেটে ১১৮ রান নিয়ে, প্রথম ইনিংসে এখনো তারা পিছিয়ে ১১৩ রানে।
প্রাইসের আগে একই ম্যাচে হ্যাটট্রিক ও সেঞ্চুরির সর্বশেষ ঘটনা ছিল ২০১৫-১৬ মৌসুমে। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া দল বোল্যান্ডের বিপক্ষে এ কীর্তি গড়েছিলেন ইস্টার্ন প্রভিন্সের কেলি স্মুটস।