এআই নিয়ে সাতটি ‘কালো’ ভবিষ্যদ্বাণী

0
96
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স( এআই)

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিতর্কের অন্যতম কণ্ঠস্বর গ্যারি মার্কাস বলেছেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জগতে কিছু অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটছে, এবং তার সবটাই সুখবর নয়।’ তিনি মনে করেন হলিউডের পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের ছায়াছবির ঘটনার মতোই পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এ নিয়ে তিনি ‘সাতটি ভয়ানক ভবিষ্যদ্বাণী’ সংকলন করেছেন। খবর বিবিসির

পাগলা ষাঁড়ের মতো নিয়ন্ত্রণহীন

গ্যারি মার্কাস বলেন, চ্যাটজিপিটির মতো সিস্টেমগুলির প্রোগামের নতুন সংস্করণ হবে ‘কাঁচের দোকানে ষাঁড় ঢুকে পড়ার মতো ধ্বংসাত্মক, বেপরোয়া এবং নিয়ন্ত্রণহীন।’

চ্যাটবটের হাতে খুন

২০২৩ সালে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই-এর গুরুতর সমস্যাগুলি প্রসারিত হতে শুরু করে: বেলজিয়ামের এক ব্যক্তি, যিনি নিয়মিত এলিজা নামের একটি এআই চ্যাটবটের সাথে নিয়মিত কথাবার্তা বলতেন, গত মার্চে তিনি আত্মহত্যা করেন।

লোকটির স্ত্রী জোর দিয়ে বলছেন, ঐ এআই প্রোগ্রামের সাথে তার স্বামীর যোগাযোগই তাকে নিজের জীবন শেষ করতে বাধ্য করেছে।

বেলজিয়াম সরকার মনে করছে, ঘটনাটি এমন একটি নজির যাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত এবং এআই ব্যবহারের বিপদ এমন একটি বাস্তবতা যা অবশ্যই বিবেচনা করা প্রয়োজন।’

চার মাস আগে প্রযুক্তি-বিষয়ক ওয়্যারড ম্যাগাজিনের নিবন্ধে মার্কাস যে সম্ভাব্য পরিস্থিতি তুলে ধরেছিলেন, তা ছিল-সম্ভবত একটি চ্যাটবট কাউকে এমন কঠিনভাবে আঘাত করবে যে ঐ ব্যক্তি নিজের জীবন শেষ করে দিতে চাইবে।’

ভুল ভবিষ্যদ্বাণী

মার্কাস বলেন, ‘প্রোগ্রামটি কিছু ভয়ঙ্কর ভুল করবে, এবং করবে এমনভাবে যা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।’

গত মার্চের শেষের দিকে একটি অদ্ভুত ঘটনা মিডিয়ার নজরে এসেছিল। এক ব্যক্তি চ্যাটজিপিটির কাছে জানতে চেয়েছিল যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত কিছু শিক্ষকের নাম। জবাবে চ্যাটজিপিটি যে তালিকা দিয়েছিল তাতে আমেরিকার একজন আইনের অধ্যাপক জোনাথন টার্লির নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। এআই প্রোগ্রামটি উল্লেখ করেছিল, অধ্যাপক টার্লি অ্যালাস্কা ভ্রমণের সময় একজন ছাত্রীর প্রতি যৌন ইঙ্গিতমূলক মন্তব্য করেছিলেন এবং তাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেছিলেন। চ্যাটজিপিটি প্রমাণ হিসেবে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করেছিল।

কিন্তু বাস্তব সত্য হলো এসব ঘটনার কিছুই ঘটেনি। অ্যালাস্কায় কোন সফর হয়নি, ওয়াশিংটন পোস্টে এনিয়ে কোন রিপোর্ট ছাপা হয়নি, এমনকি যৌন হয়রানির কোন অভিযোগও ওঠেনি। পুরো ব্যাপারটা ঐ এআই রোবট নিজে থেকে বানিয়ে দিয়েছে।

ডিপ ফে’র প্রভাব

এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো একটি অত্যাধুনিক তোতাপাখি যার নিজের কোন ধারণা নেই যে এটি ঠিক কী নিয়ে কথা বলছে এবং কখনও কখনও এটা ‘হ্যালুসিনেট’ করে। এটি এআই প্রযুক্তির একটি শব্দ যার অর্থ, প্রোগ্রামারদের প্রত্যাশার বাইরে কোন জবাব তৈরি করা।

ডিপ ফে বা ফেক ভিডিও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সুবাদের আরও বেশি পাকা হয়েছে। এখানে গত জানুয়ারি মাসে প্রচারিত একটি ফেক ভিডিও যাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার সৈন্যদের বলছেন আত্মসমর্পণ করতে।

এআই মডেলে টেক্সট জেনারেটর ছাড়াও ইদানীং ইমেজ ম্যানিপুলেট করে এমন প্রোগ্রামগুলিও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পুঁজিবাদ সমস্যার সমাধান বের করবে না

৫৩-বছর বয়সী গ্যারি মার্কাসের কাজ শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। উবারের কাছে তিনি নিজের একটি কোম্পানি বিক্রি করেছেন এবং এই পরিবহন অ্যাপ জায়ান্টের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিভাগের একটি পরীক্ষাগারে তিনি পরিচালকের কাজও করেছেন। উবারের বিরুদ্ধে যখন পরিবেশ ‘বিষিয়ে’ তোলার অভিযোগ ওঠে তখন মাত্র চার মাস পর তিনি পদত্যাগ করেন।

তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে সিলিকন ভ্যালি বিখ্যাত মন্ত্র: ‘দ্রুত এগিয়ে চলুন এবং ভেঙে নতুন জিনিস গড়ুন’ এবং বাজারে ব্যাপক প্রতিযোগিতা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বিকাশের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করছে কিনা? জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি আশা করতে পারেন না যে পুঁজিবাদ নিজে থেকেই এসব সমস্যার সমাধান করবে।’

তিনি এসব কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণের পক্ষে কথা বলেন এবং এক্ষেত্রে বিমান চলাচল খাতকে একটি উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, এই নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে।

‘এআইয়ের গডফাদার’-এর সঙ্গে আপস

গ্যারি মার্কাসের সতর্কবাণী এবং দ্রুত বিকাশমান এআই সম্পর্কে তার অবিশ্বাস যে সবসময়ই লোকে ভালভাবে গ্রহণ করেছে তা বলা যাবে না।

জেফরি হিন্টনকে বলা হয় ‘এআই-এর গডফাদার।’ গুগল থেকে তিনি সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, এবং তার কিছু পরেই বলেছেন যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সমস্যাগুলিকে তিনি ‘সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়েও বেশি জরুরি’ হিসেবে দেখেন।

তিনি বলেন, ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কিছু দিক নিয়ে হিন্টন এবং আমার মতামত ভিন্ন। আমি কিছুদিন এসব নিয়ে তার সাথে চিঠিপত্রও চালাচালি করেছিলাম, তাকে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলাম। এবং তিনি আমার সাথে একমত হয়েছিলেন, যেটা সবসময় ঘটে না। তবে যে মূল বিষয়টি নিয়ে আমরা একমত হই তা হলো, এআই-কে নিয়ন্ত্রণের।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.