উৎপাদন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে

0
96
সিরাজুল ইসলাম মোল্লা সভাপতি, বাংলাদেশ সিরামিক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিসিএমইএ)

সিরাজুল ইসলাম মোল্লা: সিরামিক পণ্য উৎপাদনে প্রধান কাঁচামাল গ্যাস। কিন্তু সাত-আট মাস ধরে গ্যাসের প্রকট সংকট চলছে। ইতিমধ্যে গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে বলেছিলাম, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পেলে দাম কিছুটা বেশি দিতে সমস্যা নেই। কিন্তু বর্তমানে আমরা গ্যাসের বাড়তি দাম দিয়েও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছি না। গ্যাসের সমস্যা একেক জায়গা একেক রকম। আমাদের অধিকাংশ কারখানা গাজীপুরে। গ্যাস-সংকটের কারণে সেখানকার কারখানাগুলোর উৎপাদন ৪০-৫০ শতাংশে নেমে গেছে। তবে ভোলা ও হবিগঞ্জে গ্যাস পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। নরসিংদীর কারখানাগুলো তিন মাস ধরে গ্যাস-সংকটে ভুগছে। অন্যদিকে রূপগঞ্জে কিছুদিন ভালো থাকলে কিছুদিন আবার খারাপ যায়। গ্যাস-সংকটের পাশাপাশি ডলার-সংকটেও সিরামিক কারখানাগুলো ভুগছে। কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারছে না।

সিরাজুল ইসলাম: অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সিরামিক পণ্যের চাহিদা খুব বেশি কমেনি। কিন্তু গ্যাস-সংকটের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় অনেক কোম্পানি চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না। সে কারণে বিক্রি কমে গেছে। উদ্যোক্তারা ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন। শ্রমিকের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করতেও উদ্যোক্তাদের কষ্ট হচ্ছে। এক বছর আগেও এমন সমস্যা ছিল না।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে আপনারা বেশ কিছু সুবিধা চেয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টাইলসের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার এবং সিরামিক পণ্যের প্রধান কাঁচামাল খনিজ মাটির আমদানিতে আর্দ্রতা বা পানি অপচয় হিসেবে বাদ দিয়ে শুল্কায়ন করা। কয়েক বছর ধরেই আপনারা দাবিগুলো করছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না…

সিরাজুল ইসলাম: ডলার ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। গ্যাস-সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। কিন্তু তারপরও কাঁচামাল আমদানিতে, বিশেষ করে খনিজ মাটিতে থাকা পানির ওপর শুল্ক দিতে হচ্ছে। বন্দরের পরীক্ষাগারে মাটি পরীক্ষা করে সেটি পানির অংশ বাদ দিয়ে শুল্কায়ন করার দাবি জানিয়েছি আমরা। এ ছাড়া টাইলস বিলাসী পণ্য না হওয়ার পরও আমাদের ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। কয়েক বছর ধরে আমরা এসব সমস্যার সমাধান করতে বলে আসছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। এদিকে একের পর এক চাপে আমাদের উদ্যোক্তারা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাজেটে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণ হলে উদ্যোক্তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।

সিরাজুল ইসলাম: টাইলসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। গ্রামেগঞ্জে নিত্যনতুন স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা হচ্ছে। সেসব স্থাপনার প্রতিটিতেই টাইলসের ব্যবহার রয়েছে। আবার বিদেশে যাঁরা আছেন, তাঁরাও দেশে পাকা বাড়ি তৈরি করছেন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। আগে একসময় ঘরের মেঝেতে মোজাইক করার চল ছিল, এখন সেই জায়গা দখল করেছে টাইলস। দেশে অনেকগুলো কারখানা হওয়ায় টাইলসের দামও মানুষের নাগালে চলে এসেছে। তাতে আমদানি কমে এসেছে। আমাদের কোম্পানিগুলো উন্নত মানসম্পন্ন টাইলস উৎপাদন করছে। কিন্তু ডলার ও গ্যাস-সংকটের কারণে তারা দেশের চাহিদা পূরণ করতেই হিমশিম খাচ্ছে। আমি মনে করি, এসব সমস্যার সমাধান হলে বিদেশেও টাইলস রপ্তানি হবে। কারণ, টাইলসের বৈশ্বিক বাজার অনেক বড়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.