লালবোটে (লাইফবোট) করে যাত্রী নিয়ে উপকূলের দিকে যাচ্ছিলেন মাঝি মো. মামুন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা। চট্টগ্রামের উত্তাল সন্দ্বীপ চ্যানেলে তখন বড় বড় ঢেউ। হঠাৎ ঢেউয়ের ধাক্কায় এক যাত্রী লালবোট থেকে উত্তাল সমুদ্রে পড়ে যান। তাঁর পরনে লাইফজ্যাকেটও ছিল না। ততক্ষণে নৌকাও এগিয়ে গেছে অনেক দূর। লোকটিও ডুবে যাচ্ছিল। উপায় না দেখে উত্তাল সন্দ্বীপ চ্যানেলে ঝাঁপ দেন নৌকার মাঝি। উদ্ধার করেন যাত্রীকে।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অসংখ্য মানুষ মাঝি মো. মামুনের প্রশংসা করেন। আজ শুক্রবার তাঁর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
মামুন বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, ওই যুবক সাঁতার জানেন। তাই ঢেউয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রথমে একটি লাইফজ্যাকেট ছুড়ে মারি। কিন্তু তিনি ওই জ্যাকেট ধরতে পারছিলেন না। বরং হাত দুটো উঁচু করে ডুবে যাচ্ছিলেন। তাই দেখে আমি পানিতে ঝাঁপ দিই। পরে তাঁকে ধরে কাঁধে নিয়ে সাঁতরে নৌকায় তুলে নিয়ে উপকূলে আসি। পরে জানতে পারলাম ওই যুবক সাঁতার জানেন না। আমার ঝাঁপ দিতে আর একটু দেরি হলে লোকটি ডুবে যেতেন। আর পাওয়া যেত না। হয়তো এতক্ষণে তাঁর লাশ উদ্ধার হতো।’
২২ বছর ধরে কুমিরার গুপ্তছড়া ঘাটে লালবোট চালান মামুন। ঘাট এলাকাতেই দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। গতকাল বেলা দুইটায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া উপকূলে নোঙর করে সীতাকুণ্ডের কুমিরা গুপ্তছড়া থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী জাহাজ। জাহাজ থেকে ৪০-৫০ জন যাত্রী উপকূলে যাওয়ার জন্য মামুনের লালবোটে ওঠেন।
মামুন জানান, দুপুরে জাহাজ থেকে প্রচুর যাত্রী নামার অপেক্ষায় থাকায় তিনি ওই যুবককে ঘাটের লোকজনের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে আবারও যাত্রী নামানোর জন্য চলে যান। পরে খবর নিতে গিয়ে জানতে পারেন, ওই যুবককে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন ঘাটে থাকা লোকজন।
গুপ্তছড়া ঘাটে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল এ রকমই একটি লালবোট উল্টে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। গত বছর ১৯ আগস্ট একটি কাঠের ট্রলার থেকে এক যাত্রী নদীতে পড়ে গিয়ে মারা যান। একই বছরের ২০ এপ্রিল সন্দ্বীপ উপকূলে একটি স্পিডবোট ডুবে গিয়ে একই পরিবারের তিন শিশুসহ চারজন মারা যান। গতকালের ঘটনাটির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকে এই ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থার জন্য হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে মাঝির সাহসিকতার প্রশংসাও করেছেন অনেকে।
সন্দ্বীপের হিউম্যান ২৪ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মো. মামুনকে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি দেখতে পেয়ে এক প্রবাসী আরও পাঁচ হাজার টাকার গিফট ভাউচার দেওয়ার ঘোষণা দেন। সন্দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই মাঝিদের আচরণ নিয়ে নানান অভিযোগ থাকলেও পানিতে ঝাঁপ দিয়ে যাত্রীর প্রাণ রক্ষা করার ঘটনাটি ব্যতিক্রম বলে মনে করছেন অনেকে।