উচ্চতা নিয়ে তিন তারকাকে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়

0
219
বিদ্যা সিনহা মিম, মৌসুমী হামিদ, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমু
অভিনয় করতে গিয়ে উচ্চতা নিয়ে তারকাদের রয়েছে অম্লমধুর স্মৃতি। কখনো উচ্চতা নিয়ে বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, কখনো প্রয়োজনেই চরিত্রের জন্য ডাক পান। তবে শৈশব থেকে ক্যারিয়ার শুরু ও অভিনয় অঙ্গনে উচ্চতা কেন্দ্র করে নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেগুলোই তুলে ধরেছেন মনজুরুল আলম।
বিদ্যা সিনহা মিম।

মিমের নাম ‘ওই লম্বা মেয়েটা’
অভিনয়ে পরিচিতি পাওয়ার পর কোথাও গেলে চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিমের আসন থাকে সবার সামনে। ইচ্ছা করলেও পেছনে গিয়ে বসতে পারেন না। কিন্তু স্কুলের দিনগুলো সামনে বসতে ইচ্ছা করলেও সেটা সম্ভব ছিল না। এর কারণ ছিল এই চিত্রনায়িকার উচ্চতা। এ নিয়ে মিম বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই অনেক লম্বা। যে কারণে বন্ধুমহলে যেকোনো কিছুতে আমাকে সবার শেষে থাকতে হতো। চাইলেও কখনো সামনের সারিতে বসতে পারতাম না। বসলেও শুনতে হতো মাথা নিচু করো, দেখা যায় না। স্কুলে লাইন ধরে যখন পিটি করতাম, তখনো আমি শেষে। এখনো বন্ধুরা আমার যত গ্রুপ ছবি পাঠায়, সেখানে আমি শেষে। যে স্কুল ও কলেজে পড়েছি, আমি ছিলাম উচ্চতায় সবার বড়।’

বিদ্যা সিনহা মিম।

এক সময় স্কুল–কলেজে সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছে মিমের পরিচয় হয়ে যায় ‘ওই লম্বা মেয়ে’ হিসেবে। নামের চেয়ে তাঁকে এ নামেই বেশি ডাকা হতো। মিম বলেন, ‘যখন সবাই একসঙ্গে কোনো কিছু শিখতে যেতাম, তখন উচ্চতার জন্য আমার অবস্থান থাকত পেছনে। বোঝেনই তো যাঁদের মনোযোগ কম, তাঁরা পেছনে অংশ নিতেন। আড্ডা ও কথা হতো। এর মধ্যে আমাকে মনোযোগী হয়ে সামনে তাকিয়ে থাকতে হতো। এভাবে একবার গান শিখতে গেলাম, সেখানেও আমার অবস্থান পেছনে। আরেকটা মজার কথা বলিনি। আমার সবচেয়ে কাছের যে বন্ধু ছিল, তার সঙ্গে আমার উচ্চতার ব্যবধান ছিল অনেক। আমরা যেখানেই যেতাম, সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। এ নিয়ে বিব্রত হতে হতো। অনেকে আমাদের খ্যাপানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু বন্ধুত্ব কি আর এগুলো মানে।’ এই চিত্রনায়িকা জানান, তাঁর উচ্চতা ৫ ফুট সাড়ে ৮ ইঞ্চি। বলে রাখা ভালো, উচ্চতা অনেক সময় বিভিন্ন চরিত্রের জন্য বাড়তি সুবিধা দিয়েছে।

মৌসুমী হামিদকে বলা হয় ‘তালগাছ’
উচ্চতা নিয়ে বিপাকের শেষ নেই অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদের। কারণ, এই অভিনেত্রীর উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। যে কারণে উচ্চতা বেশি হওয়ায় অনেক নির্মাতা তাঁকে নিয়ে কাজ করতে বিপাকে পড়েন।

মৌসুমী হামিদ।

তাঁর সঙ্গে অভিনয়ের জন্য একই মাপের উচ্চতার অভিনেতার দরকার হয়। কিন্তু আমাদের মিডিয়ার বেশি ভাগ অভিনেতার উচ্চতা মৌসুমী হামিদের চেয়ে কম। লম্বা হওয়ার কারণে বিনোদনপাড়ায় মৌসুমী হামিদকে তালগাছ নামে ডাকা হয়। মৌসুমী হামিদ জানান, উচ্চতা বেশি হওয়ায় প্রায়ই শুটিংয়ে তাঁকে শুনতে হতো—এই নিচু হও, নিচে দাঁড়াও, বাঁকা হও, খালি পায়ে হাঁট এমন নানা কথা। মৌসুমী বলেন, ‘শৈশব থেকে আমি অনেক দুরন্ত ছিলাম। গ্রামে ছুটে বেড়াতাম। সাইকেল চালাতাম। ছেলেদের মতো চলাফেরা করতাম। দুষ্টুমি করতাম। আমার উচ্চতা বেশি ছিল। এসব কারণে অনেকে কিছু বলত না।’

মৌসুমী হামিদ।

একবার মৌসুমীকে নিয়ে মজা করে অভিনেতা আবদুন নুর সজল বলেছিলেন, ‘আমরা দুজন একসঙ্গে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। প্রতিবারই অভিনয় করার সময়ে দাঁড়ানোর দৃশ্য থাকলে সবার আগে ভাবি, আমি কোন জায়গায় দাঁড়াব। কারণ, মৌসুমী আমার চেয়ে লম্বা। দাঁড়ালে যেন ওকে খাটো লাগে আর আমাকে লম্বা লাগে; সে কারণে আমার জন্য উঁচু জায়গা খুঁজতে হতো।’ কথাগুলো বলেই হাসতে থাকেন এই অভিনেতা। উচ্চতা নিয়ে এমন অনেক মজার গল্প রয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে মৌসুমী হামিদ জানান, অনেকে সহযোগিতা করলেও কেউ কেউ তাঁর উচ্চতা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতেন। এ নিয়ে শুটিংয়ে তাঁর মন খারাপ হয়েছে। তবে তিনি সব সময় ব্যালান্স করে অভিনয় করতে চান। এটা তাঁর কাছে কোনো বাধা নয়। তবে এর আগে জানিয়েছিলেন, উচ্চতা বেশি হওয়ায় বিয়ের জন্য ছেলে খুঁজে পাচ্ছেন না।

বিব্রত হতে হয় হিমিকে
ছোট পর্দার এই সময়ের ব্যস্ত অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। এখনো এই অভিনেত্রীকে প্রায়ই বিব্রত হতে হয়। এর কারণ তাঁর উচ্চতা। গড় মেয়েদের মধ্যে তাঁর উচ্চতা অনেকটা বেশি। তিনি জানান, তাঁর উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। মজা করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘উচ্চতা নিয়ে মাঝেমধ্যে কী যে বিপদের মুখোমুখি হতে হয়। এই ধরেন, আমি কোনো লিফটে উঠলাম। সেখানে সবাই প্রথমে আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে আমার পায়ের দিকে তাকায়। প্রথমে তারা দেখে আমি হিল পরে আছি কি না। তখন কী যে বিব্রত লাগে। মনে হয় কেন আমার এত উচ্চতা।’

অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমু।

বিভিন্ন সময় জান্নাতুল সুমাইয়া হিমিকে শুটিংয়ে নানা কসরত করে শুটিং করতে হয়েছে। কারণ, বেশির ভাগ অভিনয়শিল্পী তাঁর চেয়ে লম্বায় কিছুটা কম থাকেন। এগুলো শুটিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধা হতে পারে না। তবে এ নিয়ে মজার অনেক ঘটনাও যেমন ঘটে, তেমনি সবার আলোচনার কেন্দ্রে থাকেন তিনি।

সে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে হিমি বলেন, ‘ক্যারিয়ার শুরুর দিকে একটি নাটকে আমি ছিলাম গ্রামের সাধারণ গৃহিণী। সেখানে আমার স্বামীর চরিত্রের অভিনেতার উচ্চতা আমার চেয়ে কম। তখন দুই পা ছড়িয়ে দাঁড়াতে হতো। এভাবেই সংলাপ দিতে হতো। আবার কখনো ফ্রেম ছোট করে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হতো। আবার দেখা যেত, কোনো দৃশ্যে রিকশা থেকে নেমে শট দিতে হবে। দেখা গেল লম্বার ঝামেলা এড়ানোর জন্য রিকশায় বসেই শট দিলাম। সহ–অভিনয়শিল্পীরা বলতেন, তুমি অনেক লম্বা, তোমার সঙ্গে কৌশলে অভিনয় করতে হবে। মূলত আমার বেবি ফেস। এসব নিয়ে অনেক সময় নিরাপত্তাহীনতা বোধ করতাম। এখন আমিও অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এসব নিয়ে মজা বেশি হয়।’

অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমু।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.