যাঁদের নানা রকম অসুস্থতা আছে, তাঁদের এ সময় খাবারের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। খেয়েই শুয়ে পড়বেন না বা দিবানিদ্রা দিতে যাবেন না।
পবিত্র ঈদুল আজহার সময় মাংসের নানা পদ ছাড়াও সঙ্গে নানা রকম খাবারদাবার থাকে কয়েক দিনের খাদ্যতালিকায়। কাবাব, মাংসের ঝোল, কলিজা, মাথা, ভুঁড়ি ইত্যাদি নানা রকম খাবার খাওয়া হয় ঈদের সময়, যা সচরাচর আমরা খাই না। এসব খাবার অনেকের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা তৈরি করে। যেমন অতিরিক্ত গ্যাস হওয়া, অ্যাসডি রিফ্লাক্স, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, আছে প্রতিকার। ঈদের সময় খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।
মাংস খাবেন পরিমিত। প্রতি বেলায় মাংস না খাওয়াই ভালো। দুপুরে মাংস খেলে রাতে অন্য কিছু রাখুন। সঙ্গে অন্যান্য খাবারও খেতে হবে। যেমন শাকসবজি, সালাদ, ফলমূল ইত্যাদি।
পর্যাপ্ত পানি অবশ্যই পান করতে হবে, না হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তা ছাড়া এখন অনেক গরম পড়ছে। পানিশূন্যতা যেন না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঈদের দিন অনেকের অনেক পরিশ্রম করতে হয়, বিশেষত যাঁরা মাংস কাটেন, তাঁদের জন্য সার্বক্ষণিক পানি ও খোলা বাতাসের ব্যবস্থা থাকা উচিত। নয়তো এই গরমে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
কোরবানির মাংসের সঙ্গে দুধ-জাতীয় খাবার, যেমন ফিরনি,পায়েস ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। এতে অতিরিক্ত গ্যাস হতে পারে। তা ছাড়া অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয়ে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। খেতে হলে আলাদা কোনো সময় খেতে হবে, একই বেলায় খাওয়া ঠিক হবে না। তবে টক দই অনেক সময় হজমে সহায়তা করে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিন। মাংস কাটাকুটির পর দ্রুত জীবাণুনাশক দিয়ে বাড়িঘর পরিষ্কার করে ফেলুন। দা, বঁটি, ছুরি—যা ব্যবহৃত হয়েছিল, তা-ও ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। কাঁচা মাংস বেশিক্ষণ বাইরে রাখা যাবে না। দ্রুত রেফ্রিজারেটরে ঢোকাতে হবে।
যাঁদের নানা রকম অসুস্থতা আছে, তাঁদের এ সময় খাবারের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। খেয়েই শুয়ে পড়বেন না বা দিবানিদ্রা দিতে যাবেন না। একবারে অতিরিক্ত খাবেন না, এক দিনেই গরু, খাসি, কলিজা, পায়া সব পদ খেয়ে ফেলতে হবে, এমনটা নয়। রান্নার সময় চেষ্টা করুন অতিরিক্ত তেল-মসলা ব্যবহার না করতে। একসঙ্গে অনেক রান্না করে তারপর বাসি মাংস এই গরমে খাবেন না। আগের দিনের খাবার গরম করতে হবে সাবধানে, ভালো করে বয়েলিং পয়েন্ট পর্যন্ত।
সাধারণ গ্যাসের সমস্যা, অ্যাসিড রিফ্লাক্স অথবা বদহজম হলে প্রাথমিকভাবে সাধারণ গ্যাসের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে ও প্রচুর আঁশযুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হলে স্যালাইন পান করুন। উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের রোগীরাও স্যালাইন পান করতে পারবেন ডায়রিয়ার সময়। তীব্র পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে বা বারবার বমি হলে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে।
ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা