‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ অ্যাপে ৫০ কোটি খুইয়ে হা-হুতাশ

0
63
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা

এবার ‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামের একটি অ্যাপে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন রাজশাহীর শতাধিক মানুষ। অন্তত ৫০ কোটি টাকা খুইয়ে তারা হা-হুতাশ করছেন। শনিবার দুপুরে নগরীর কাদিরগঞ্জে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। তারা পাওনা টাকা ফেরত ও প্রতারকদের শাস্তি দাবি করেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অ্যাপের মাধ্যমে ফরেক্স মার্কেটে বিনিয়োগের কথা বলে তাদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। ১ লাখ টাকা বিনিয়োগে মাসে রেমিট্যান্স আকারে ১১ হাজার ২০০ টাকা মুনাফা দেওয়ার কথা ছিল। বলা হয়েছিল, অ্যাপটি বিদেশি, কিন্তু বাস্তবে সেটি প্রতারক চক্রের বানানো।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, রাজশাহীর শতাধিক মানুষ এই অ্যাপে অন্তত ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সারাদেশে বিনিয়োগকারী দুই হাজারের বেশি। প্রতারক চক্র সব মিলিয়ে অন্তত ২০০ কোটি টাকা হাতিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় রাজশাহীতে সম্প্রতি দুটি মামলা হয়। এরপর আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি দিয়েছে পুলিশ।

ভুক্তভোগীরা জানান, ঢাকার বাসিন্দা সজীব কুমার ভৌমিক ওরফে মাহাদি হাসান এই প্রতারক চক্রের হোতা। তাঁর সঙ্গে ‘কান্ট্রি লিডার’ হিসেবে ছিলেন মোতালেব হোসেন ভূঁইয়া। কান্ট্রি ডিরেক্টর ছিলেন ফারুক হোসাইন সুজন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ, বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সোহাগের স্ত্রী ফাতেমা তুজ জহুরা ওরফে মিলি এবং জেলা এজেন্ট মিঠুন মণ্ডল। মিলি ছাড়া অন্য সবাই এখন পলাতক।

নগরীর শিরোইল এলাকার আবদুল নাঈম একটি ব্যাংকে দীর্ঘদিন চাকরি করে অবসর নিয়েছেন। হাতে টাকা ছিল। এক মামার মাধ্যমে সোহাগের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সোহাগ তাঁকে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অ্যাপে বিনিয়োগ করান। নাঈম বিনিয়োগ করেন ৩৫ লাখ টাকা। আত্মীয়স্বজন বিনিয়োগ করেন আরও ৯৮ লাখ টাকা। গতকাল মানববন্ধনে আবদুল নাঈম বলেন, ‘প্রতারণার শিকার হয়ে আমরা এখন নিঃস্ব।’ টাকা ফেরতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন তিনি।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ইউসুফ আলী বলেন, ‘প্রথমে ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। পরে ট্রাক্টর বিক্রি করে আরও ২৭ লাখ টাকা দিই। আমার বন্ধুরা প্রায় কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। এখন বুঝতে পারছি, বিদেশি নয়, এটি দেশি প্রতারক চক্র।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের টাকা বিদেশে পাচার হয়নি। প্রতারক সোহাগ ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনেছে। নামে-বেনামে আরও সম্পদ গড়েছে। সরকার আমাদের টাকাগুলো ফেরতের ব্যবস্থা করুক।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। আরও কয়েকজন বিনিয়োগ করেছেন ৩৫ লাখ টাকা। কেউ ১ টাকাও লাভ পাইনি। জায়গা-জমি বিক্রি করে বিনিয়োগ করে এখন নিঃস্ব সবাই।

নগরীর বহরমপুর এলাকার গৃহবধূ রেবেকা সুলতানা বিনিয়োগ করেছেন ১ লাখ টাকা। তিনি জানান, তাঁর ১০-১২ জন আত্মীয় এই অ্যাপে বিনিয়োগ করেছেন। টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

প্রতারণার এই ঘটনায় রাজশাহীর রাজপাড়া ও গোদাগাড়ী থানায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগের স্ত্রী ফাতেমা তুজ জহুরা ওরফে মিলি। তিনি ছাড়া মামলার অন্য আসামি সবাই পলাতক বলে জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা। এদিকে, হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগে মিলি উল্টো বাদী হয়ে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।

গোদাগাড়ী থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘মামলার এক আসামি জামিন নিয়েছেন বলে শুনেছি। অন্য আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় কাগজ পাঠানো হয়েছে। অবস্থান শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’

উল্লেখ্য, এর আগে এমটিএফইসহ বিভিন্ন অ্যাপে বিনিয়োগ করে মোটা অঙ্কের টাকা খোয়ান দেশের শত শত মানুষ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.