আলুর বড় মজুত, দাম বাড়ছে

শাহারুল আলম, জয়পুরহাট

0
89

‘মার্চ-এপ্রিল মাসে কয়েকটি হিমাগারে ছয় হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছি। বাজারে এর দাম বেড়েছে। তবে আমি এখনও এক বস্তাও বিক্রি করিনি। সংরক্ষণের মেয়াদও অনেক রয়েছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী ঘটে।’ কথাগুলো বলছিলেন জয়পুরহাটের আলু ব্যবসায়ী মিঠু ফকির। তাঁর মতো আরও অনেকে একযোগে মজুত করেছেন।

বাজারে এক মাস আগে এক কেজি কার্ডিনাল ও স্টিক (লাল) আলু ১৭-১৮ টাকা, ডায়মন্ড (সাদা) ১৮-১৯, দেশি পাকরি (লাল) ২১-২২ এবং রুমানা (পাকরি) ২০ টাকায় বিক্রি হয়। শনিবার সদরের নতুন ও পুরোনো বাজার, কালাই পৌর বাজার ও পুনট হাটে লাল আলু ৩৫-৩৬, ডায়মন্ড ৩৮, দেশি পাকরি ৪০-৪২ এবং রুমানা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত।

শনিবার কালাই হাটে আসা কৃষক আব্দুর রহমান, আব্দুল জলিল, কফিল উদ্দিন, জাহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, কয়েক দিন আগে এক কেজি আলু কিনেছেন ১৯ থেকে ২০ টাকায়। এখন কিনতে হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়।

অথচ ব্যবসায়ীরা মৌসুমের শুরুতে সাড়ে ১১ থেকে ১৩ টাকা কেজি আলু কিনেছেন। হিমাগারের ভাড়াসহ সব মিলে খরচ পড়েছে ১৫-১৬ টাকা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মার্চ-এপ্রিলে জয়পুরহাটের হিমাগারে ৬৫ কেজি ওজনের ২০ লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ হয়েছে। পাঁচটি উপজেলার ১৬টি হিমাগারে উৎপাদনের ৯৩ শতাংশ মজুত রয়েছে। উত্তোলনের শেষ সময় ১৫ নভেম্বর।

ব্যবসায়ী ও হিমাগার ব্যবস্থাপকরা জানিয়েছেন, গত বছর ১৬টি হিমাগারে প্রায় ২১ লাখ বস্তা আলু মজুত ছিল। গত মে মাসে প্রকারভেদে এক কেজি কার্ডিনাল ও স্টিক (লাল) আলু ৭-৮ টাকা, ডায়মন্ড (সাদা) ৮-৯ টাকা এবং দেশি পাকরি (লাল) ১০-১২ টাকায় বিক্রি হয়। এবার একই পরিমাণ মজুত থাকলেও দাম বেড়েছে চার-পাঁচ গুণ।

চাহিদা বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় আলু উত্তোলন করছেন না। এতে দাম অস্বাভাবিক বাড়ছে বলে অভিযোগ হিমাগার মালিক, খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের। তাঁদের দাবি, ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে সংকট সৃষ্টি করেছেন। কম আলু বের করে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়াচ্ছেন। হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা।

জয়পুরহাট পৌর বাজারের খুচরা বিক্রেতা মফছের আলী বলেন, আলু হিমাগারে থাকলেও বিক্রি করছেন না। অন্যভাবে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি দিলে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে। কালাই হাটের বিক্রেতা মাসুদ বলেন, শনিবার পুনট হিমাগারে গিয়ে দেখেন, শুক্রবারের চেয়ে দাম বস্তাপ্রতি ৩৭০-৪২০ টাকা বেশি। এ কারণে ফেরত এসেছেন। হাটের দিনেও তাঁর দোকানে আলু নেই।

যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, দাম বেশির সঙ্গে মজুতের সম্পর্ক নেই। তবে হিমাগার মালিকরা বলছেন, কী কারণে ব্যবসায়ীরা আলু উত্তোলন করছেন না, তা জানা নেই তাঁদের। সরকার উদ্যোগ নিয়ে ব্যবসায়ীদের তালিকা নিয়ে নজরে রাখলে বাজার অস্থির হবে না।

শনিবার কয়েকটি বাজারে বিক্রেতা ও ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকের বাড়িতেও আলু মজুত রয়েছে। আর ১৬টি হিমাগারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে মার্চ-এপ্রিল মাসে আলু সংরক্ষণ হয়েছে গড়ে ২০ লাখ বস্তা। শনিবার পর্যন্ত বের হয়েছে গড়ে ১ লাখ ৪০ হাজার বস্তা, যা মজুতের মাত্র সাত শতাংশ।

ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া বলেন, অর্থের অভাবে তিনি মজুত করতে পারেননি। তারপরও কেনাবেচা করছেন। যে দামে কেনেন, দু’এক টাকা লাভ করে মহাজনদের আড়তে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। যাঁরা মজুত করেছেন, এক মাসের ব্যবধানে তাঁদের দ্বিগুণ লাভ থাকছে। তারপরও বিক্রি করছেন না। তাঁদের উদ্দেশ্য ভালো না। আরেক ব্যবসায়ী হাবিবুল হাসান বলেন, ‘দাম বাড়লেও ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন না। তাহলে কেন দাম বাড়বে না?’

সরাইলের এম ইসরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক রায়হান উদ্দিন বলেন, আরও বেশি লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করছেন না। উত্তোলনের সময় রয়েছে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এটিও কারণ হতে পারে। সরকারকেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, আলুর দাম বাড়ার কথা শুনলেও এক সপ্তাহে দ্বিগুণ হওয়ার বিষয়টি তাঁরা জানা নেই। যে সব ব্যবসায়ী কারসাজি করছেন, তাঁদের তালিকা করে আইনগত পদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি জানান।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভি বলেন, জেলায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও জোরদার করা হবে। যারা সিন্ডিকেটে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.