স্থাপত্য অঙ্গনের অসাধারণ প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিতে ৩৪ বছর ধরে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে ভারতের সিমেন্ট কোম্পানি জে কে সিমেন্ট লিমিটেড। এই প্রতিযোগিতার সর্বশেষ সংস্করণে প্রায় ২৫০টি সাবমিশনের মধ্য থেকে বিদেশি বিভাগে বর্ষসেরা স্থপতি হয়েছেন বাংলাদেশের স্থপতি মাহমুদুল আনোয়ার। এ ছাড়া এই বিভাগের কমেন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন স্থপতি বায়েজিদ মাহবুব খন্দকার। ভারত ছাড়াও এবার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ, ভুটান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, নেপাল, সেশেলেস, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া ও উগান্ডার স্থপতিরা।
১.
স্থপতি মাহমুদুল আনোয়ারের প্রকল্পটির নাম রিয়াজ লফট। ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের খানপুরে রয়েছে শিশুদের একটি মাঠ। এই প্রকল্পের মালিক রিয়াজের শৈশবের বড় একটা অংশ এই মাঠেই কেটেছে। মাঠের পাশেই তাঁর নানিবাড়ি। এখনো সময় পেলেই ছুটে যেতে চান শৈশবের সেই নানাবাড়ি। মাঠের পাশের রাস্তার ওপারেই নানিবাড়িসংলগ্ন আড়াই কাঠার ছোট্ট একটি জায়গা। সেখানে নিজের জন্য এমন একটি বাড়ি গড়তে চেয়েছিলেন, যে বাড়ি থেকে সহজেই নজরে পড়বে ছোটবেলার সেই মাঠ। মাত্র ১৬ ফুট বাই ৬৫ ফুটের বাড়িটিতেই রিয়াজের সেই স্বপ্ন সত্যি করেছেন মাহমুদুল আনোয়ার। বাড়িটির নকশার মুখ্য বিষয়ই ছিল অপর পাশের মাঠ। বাড়িটির দোতলার আকাশখোলা টেরাসটি যেন মাঠটি দেখার জন্যই তৈরি করা একটি মাচা!
স্থপতি মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদ বলেন, ‘ছোট্ট এই জায়গায় এই প্রকল্প আমরা পুরোপুরি রাজউকের নীতিমালা মেনে করেছি। বাড়িটি আসলে মাঠকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। যেহেতু এই বাড়ি নিয়মিত ব্যবহারের জন্য নয়, মূলত অবকাশ যাপনের জন্য, আমরা বাড়িটি থেকে মাঠের দিকে একটি ইনফিনিটি ভিউ তৈরি করতে চেয়েছি।’
২.
পুরোনো ভবনটিকে বলা হয় ঢাকার শুক্রাবাদের ব্যস্ততম সড়ক মিরপুর রোডের প্রথম ছয়তলা স্থাপনা। যার এক পাশে আবার পেছনের ১২টি প্লটে যাওয়ার রাস্তা রাখা হয়েছে। ভবনটি কখনো ছিল হোটেল, কখনো অফিস, কখনো স্কুল, ইউনিভার্সিটির অংশ। আবার কখনো ছিল ব্যাংক। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই অনেকবারই ভবনটির নকশায় বদল এসেছে।
সেই ভবনের প্রথম দুই তলায় ফ্ল্যাগশিপ স্টোর, পরের তিনটি তলায় ১৩টি করে ৩৯টি হোটেল রুম, নিচে হোটেল লবি ও কফিশপ আর ছাদে কিচেন, রুফটপ রেস্তোরাঁ—এ রকম একটি প্রকল্পের দায়িত্ব পান স্থপতি বায়েজিদ মাহবুব খন্দকার। স্ট্রাকচারাল বিষয়গুলো একই রেখে পুরো ভবনটির লে-আউট সংস্কার করেন তিনি।
স্থপতি বায়েজিদ মাহবুব বলেন, ‘ভবনের প্রতিটি ফ্লোর ভিন্ন ভিন্নভাবে ইম্প্রোভাইজ করা হয়েছিল। সেখান থেকে ভবনের ভেতরে বেশি হাত না দিয়ে আমরা বাইরে একটি লাইট ওয়েট স্ক্রিন নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি। এই সড়কে মূলত কাচের তৈরি ভবনই বেশি দেখা যায়। আমরা দেখি, কাচ ব্যবহার করে ভবনকে গরম করে আবার তা ঠান্ডা করা হয়। সে জন্য এখানে আমরা লুভরের ব্যবহারে যাই। সাধারণত সবাই উল্লম্ব এবং অনুভূমিকভাবে ব্যবহার করে থাকে। আমরা এখানে লুভরগুলোকে ভবনের সম্মুখ অভিমুখী করে বসাই। এতে পশ্চিমের রোদ থেকে বেশ কিছুটা ছায়া পাওয়া যায়, ভিন্নধর্মী একটা কিছুও হয়।’
এভাবেই অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়েও এই ব্যস্ত সড়কে একটি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হয়ে ওঠে হোটেল নন্দিনী। যেখানে সবুজের ছায়া যেমন আছে, তেমনি আছে যেকোনো দুর্ঘটনায় জরুরি নির্গমনের সিঁড়ি। এ ছাড়া ভবনটির সজ্জায় প্রাধান্য পেয়েছে মৃৎশিল্প ও হস্তশিল্পের নানা উপাদান। একটি পুরোনো, অপরিকল্পিত স্থাপনাকে নতুনভাবে রূপ দেওয়ার অনন্য এক উদাহরণ এই প্রকল্প।
সামিয়া শারমিন