আজকে দেশের বাস্তবতায়– সমাজে যারা নিপীড়িত, নিগৃহীত, সব ক্ষেত্রে লাঞ্ছনা-বঞ্চনার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে, তাদের দেখার কেউ নেই। পানির কারণে আদিবাসীরা আত্মহত্যা করছে। এটাই বাস্তবতা। নানা ক্ষেত্রে আদিবাসীদের কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দিকদর্শন নিয়ে আদিবাসীদের মুক্তির পথ খুঁজে বের করতে হবে।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে সংগঠনের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি। সম্মেলনে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের পক্ষে ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন। সভায় আলোচকরা ১২ দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে অদিবাসী জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার জোর দাবি জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, নিরাপত্তার চশমা দিয়ে আদিবাসীদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে শুধু পার্বত্যাঞ্চল নয়, সমতলসহ সারাদেশের আদিবাসীদের সমস্যা সমাধানের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছিল। এখন রাষ্ট্রকেই এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। দীর্ঘ সময়ে চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না করা ওয়াদার বরখেলাপ।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আদিবাসীদের দাবি আদায়ে সিপিবি তার চিন্তা থেকে আন্দোলন চালাবে। তাদের দাবি অনুযায়ী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, উত্তরাঞ্চলে ফসল আবাদের সময় আদিবাসীদের সেচের পানি দেওয়া হয় না। তার জন্য আদিবাসীদের কেউ কেউ বিষ পান করে মৃত্যুবরণও করেছে। এই বৈষম্য থেকে তাদেরই মুক্তির পথ বের করতে হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আদিবাসীদের অধিকার হরণও দুর্নীতি। কারণ এটি করা হয় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষের অধিকার হরণ করা ঘুষের চেয়েও বড় দুর্নীতি। বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের ভূমির সমস্যার সমাধান হয়নি। তাদের ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এই ভূমি দখলে রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতও আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন, ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র নাথ সরেন প্রমুখ।