ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। আরও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে আগস্টে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত জুলাই মাসের ৩১ দিনে ডেঙ্গুতে যতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে।
জুলাইয়ে ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আগস্টের ১৭ দিনে সেই সংখ্যা ৪৪ হাজার ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২০৪ জনের। আগস্টে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২০২ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগস্টে ডেঙ্গু সংক্রমণ শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। সংক্রমণের গতি যে হারে বাড়ছে, তাতে এবার অন্যান্য বছরের রেকর্ড ছাড়াতে পারে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সাতজন ঢাকা শহরের এবং দু’জন ঢাকার বাইরের। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ১ হাজার ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮০৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭৬১ জন।
এ নিয়ে চলতি বছরে এ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৭৭ জনে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ৪৬ হাজার ৯৩৩ জন ও ঢাকার বাইরে ৪৮ হাজার ৯৪৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৪৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ৩৪৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ১১০ জন। এ বছর মোট ৮৭ হাজার ৮৫১ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা শহরের ৪২ হাজার ৯৬৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪৪ হাজার ৮৮৪ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার হার শতকরা ৯২ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি থাকার হার ৮ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। গত বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩৮২ জন এবং ২৮১ জন মারা যান।
এদিকে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ঢাকার রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে। তবে বাইরে থেকে আসা রোগীর চাপ দিন দিন বাড়ছে। চিকিৎসক এবং প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানো হলেও রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হন মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। বর্তমানে এখানে ৬শর বেশি ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ নিয়াতুজ্জামান। এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৫০০। পরিচালক জানান, ডেঙ্গুর চিকিৎসায় বিশেষায়িত চারটি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। এর পরও হাসপাতালের বেড ফাঁকা নেই। বারান্দা ও মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে রোগীদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ঢাকার বাইরে সাত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এগুলো হলো– রাজশাহী, যশোর, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও সিলেট। এসব এলাকার ডেঙ্গু প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।