আগস্টেই চালু স্মার্ট বাস, শিক্ষার্থীরা উঠলেই অভিভাবককে বার্তা, দেখা যাবে বাসের ভিডিও

0
182
বিদ্যালয় ও সড়ক বিবেচনায় নগরের বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে ১০টি স্কুলবাস

শিক্ষার্থীরা বাসে উঠলেই খুদে বার্তা যাবে অভিভাবকের মুঠোফোনে। অভিভাবকেরা বাসায় বা কর্মস্থলে বসে মুঠোফোনে দেখতে পারবেন তাঁর সন্তান বাসে রয়েছে কি না। চট্টগ্রামে শিশু–কিশোরদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা দূর করতে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এ ধরনের স্কুলবাস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

নগরে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১০টি দ্বিতল বাস রয়েছে। এসব বাসকেই ‘স্মার্ট বাসে’ রূপান্তর করা হবে। পরে বাসের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্মার্ট বাসটিতে শিক্ষার্থীদের একটি স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। বাসে ওঠা এবং নামার সময় তারা সেটি বাসে থাকা ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইসে দেখাবে। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাদের অভিভাবকের কাছে খুদে বার্তা চলে যাবে ‘আপনার সন্তান বাসে উঠেছে/নেমেছে’।

শিক্ষার্থীদের যে কার্ড দেওয়া হবে, সেটিতে টাকা রিচার্জ করা যাবে। সেখান থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাড়া কেটে নেওয়া হবে। তবে ভাড়া এখনো নির্ধারণ করা না হলেও তা ১০ টাকার মধ্যেই থাকবে। পাশাপাশি বাসের আইপি ক্যামেরার অ্যাড্রেস অভিভাবকদের দেওয়া হবে। এতে অভিভাবকেরা নিজেরাই বাসে তাঁদের সন্তানদের দেখতে পারবেন।

এই স্মার্ট বাসগুলোর উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের যাত্রা নিরাপদ করা। অভিভাবকদের ভোগান্তি, যানজট নিরসন এবং দুর্ঘটনা রোধেও ভূমিকা রাখবে এই প্রকল্প।

আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক

২০২০ সালে চট্টগ্রাম নগরের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি দ্বিতল স্কুলবাস উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে নগরে প্রতি মাসে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করে এই বাসগুলোতে। দ্বিতল এ বাসগুলোর প্রতিটিতে ৭৩টি করে আসন রয়েছে। বাসগুলোতে অনেক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করে। এসব বাসে জিপিএস ট্র্যাকার, জিআইএস প্রযুক্তি, ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস ও আইপি ক্যামেরা স্থাপন করে ১০টি বাসকেই স্মার্ট বাস হিসেবে রূপান্তর করবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

প্রতিটি বাসের সংস্কারকাজ, ডিজিটাল ডিভাইস স্থাপন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সম্পূর্ণ অর্থায়ন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে। আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে বাসগুলোর যাত্রা শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের।

পরিকল্পনার শুরু যেভাবে

গত মার্চ-এপ্রিল মাসে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘স্মার্ট চট্টগ্রাম বেস্ট আইডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ওই প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুর রশীদ ও তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার মো. ফায়াজ উদ্দিন ‘স্মার্ট স্কুলবাস’ নামের একটি প্রকল্প জমা দেন। প্রকল্পটি প্রতিযোগিতায় সেরা ৫০–এ স্থান পায়। পরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন।

শিক্ষার্থীরা বাসে উঠলেই খুদে বার্তা যাবে অভিভাবকের মুঠোফোনে। অভিভাবকেরা বাসায় বা কর্মস্থলে বসে মুঠোফোনে দেখতে পারবেন তাঁর সন্তান বাসে রয়েছে কি না।

মো. আবদুর রশীদ বলেন, জামালখান মোড়ে প্রায়ই সন্তানকে বিদ্যালয়ের জন্য যানবাহনে তুলে দিতে গিয়ে অভিভাবকদের ভোগান্তি দেখতেন তিনি। তাঁর সামনেই একদিন টেম্পো থেকে পড়ে এক বিদ্যালয়ছাত্রী আহত হয়। এরপর থেকেই বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে থাকেন তিনি। পরে ব্যবসায়িক অংশীদার মো. ফায়াজ উদ্দিনকে নিয়ে স্মার্ট স্কুলবাসের প্রকল্পটি প্রস্তুত করেন।

যেসব রুটে চলবে বাস

বিদ্যালয় ও সড়ক বিবেচনায় নগরের বহদ্দারহাট-মুরাদপুর থেকে চকবাজার-গনি বেকারি-জামালখান-চেরাগী পাহাড়-আন্দরকিল্লা-লালদীঘি কোতোয়ালি হয়ে নিউমার্কেট পর্যন্ত এবং অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর-২ নম্বর গেট-জিইসি-টাইগারপাস হয়ে আগ্রাবাদ পর্যন্ত রুটে চলাচল করছে এই ১০ বাস। তবে নগরের হালিশহর, বড়পোল, ইপিজেড ও মোহরা এলাকায় বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় থাকলেও সেখানে কোনো স্কুলবাস চলাচল করে না। স্মার্ট বাসগুলোও শুরুতে আগের রুটেই চলাচল করবে।

চট্টগ্রাম নগরে প্রতি মাসে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করে এই বাসগুলোতে
চট্টগ্রাম নগরে প্রতি মাসে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করে এই বাসগুলোতে

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১০টি স্মার্ট বাসের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়ে গেলে আরও পাঁচটি বাসের জন্য আবেদন করবেন তাঁরা। তখন রুট বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও এ ধরনের স্মার্ট বাস চালু করা হবে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, স্মার্ট বাসে যাতায়াতের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে। তখন শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের জন্য একটি ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বেসরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও নিবন্ধন করতে পারবেন।

অভিভাবকেরা যা ভাবছেন

সম্প্রতি নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় কথা হয় পাঁচজন অভিভাবকের সঙ্গে। স্মার্ট স্কুলবাস প্রকল্প নিয়ে তাঁদের ধারণা জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এটি একটি ভালো উদ্যোগ হবে। অধিকাংশ অভিভাবক সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজেরাই সন্তানদের আনা-নেওয়া করেন। যাঁদের সন্তানেরা এসব বাসে যাতায়াত করে, তাঁরাও দুশ্চিন্তায় থাকেন। আইপি ক্যামেরা আর লোকেশন ট্র্যাকিং থাকলে অন্তত অভিভাবকেরা জানতে পারবেন তাঁর সন্তান ঠিকঠাক গন্তব্যে পৌঁছাল কি না।

বাসের আইপি ক্যামেরার অ্যাড্রেস অভিভাবকদের দেওয়া হবে। এতে অভিভাবকেরা নিজেরাই বাসে তাঁদের সন্তানদের দেখতে পারবেন।
বাসের আইপি ক্যামেরার অ্যাড্রেস অভিভাবকদের দেওয়া হবে। এতে অভিভাবকেরা নিজেরাই বাসে তাঁদের সন্তানদের দেখতে পারবেন।

মো. ইমরান শিকদার নামের একজন অভিভাবক বলেন, পরিচিত অনেকেই নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজেরা অফিস থেকে ক্ষণিকের ছুটি নিয়ে সন্তানদের বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়ার কাজটি করেন। এতে সময় ব্যয়ের পাশাপাশি খরচও বাড়ে। স্মার্ট বাস সার্ভিস চালু হলে শিক্ষার্থীরা যেমন নিরাপদ থাকবে, তেমনি অভিভাবকেরাও নিশ্চিন্ত থাকবেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান  বলেন, এই স্মার্ট বাসগুলোর উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের যাত্রা নিরাপদ করা। অভিভাবকদের ভোগান্তি, যানজট নিরসন এবং দুর্ঘটনা রোধেও ভূমিকা রাখবে এই প্রকল্প। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরকেই এই স্মার্ট বাসের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.