ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে কাপড় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাব বলছে, অপরাধী চক্রের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দেওয়ায় তাঁকে খুন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে ওই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত রোববার রাতে কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাত পাখি এলাকায় সাইফুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং চামচ দিয়ে চোখ উপড়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। উন্নত জীবনের আশায় সাইফুলের পাশ্চাত্যের একটি দেশে যাওয়ার কথা ছিল আজ মঙ্গলবার। এর আগেই তিনি খুন হন। মূলত স্থানীয় মাদক কারবারি ও অপরাধী চক্রের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে তাঁকে খুন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে মো. রাজন হোসেন (৩১) এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। গ্রেপ্তার তাঁর সহযোগীরা হলেন জানে আলম (৩৬), মো. সুমন ওরফে গর্দা সুমন (২৫), মো. লিটন হোসেন (২৬), মো. দিপু (২৩), সরোয়ার আকন্দ (২৬) ও মো. সজীব (২৯)।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে স্থানীয় একটি রিকশার গ্যারেজ চালানোর পাশাপাশি মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, গাড়ি চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে।
ব্যবসায়ী সাইফুল বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনের বিষয়ে তথ্য দিতেন উল্লেখ করে খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, সর্বশেষ গত ২৮ জুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে রাজন গ্রেপ্তার হন। রাজনের সহযোগী জানে আলম ও মো. সুমন বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এসব গ্রেপ্তারের পেছনেও সাইফুলের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে ধারণা তাঁদের। এ কারণে তাঁরাও সাইফুলের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
রাজন গত ১৯ জুলাই জামিনে ছাড়া পেয়ে সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, তাঁরা জানতে পারেন, সাইফুল বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এ জন্য বিদেশ যাওয়ার আগেই তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন খুনিরা। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে খুনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাপড়ের দোকান থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে সাইফুলকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। ক্রিকেট ব্যাট, লাঠি, রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাইফুলের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন খুনিরা। রাজন পাশের একটি দোকান থেকে চামচ নিয়ে এসে সাইফুলের চোখ উপড়ে ফেলেন।
র্যাবের ভাষ্য, এই চক্রের সদস্যরা রাজনের নেতৃত্বে এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ করেন। রাজনের অন্যতম সহযোগী জানে আলম পেশায় রাজমিস্ত্রি। আড়ালে তিনি বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। রাজনের আরেক সহযোগী সুমন কাঠ কাটার কাজ করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার সাতজন ছাড়াও সাইফুল হত্যাকাণ্ডে আরও কয়েকজন জড়িত। তাঁদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।