অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান কমেছে, বেকারত্ব বেড়েছে কিছুটা

0
139
যুক্তরাষ্ট্র

অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের হার কমে গেছে। ফলে বেড়েছে বেকারত্বের হার। এতে ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে কর্মসংস্থানে যে গতি এসেছিল, তা কমতে শুরু করেছে।
দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যদিও অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস ছিল, গত মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশটিতে বেকারত্ব ৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ৯ শতাংশে উঠেছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ৯৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সেই মাসে ৩ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার পূর্বাভাস থাকলেও শেষমেশ খুব কর্মসংস্থান হয়নি, অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে কর্মসংস্থানের হার ছিল অনেক কম।

এ খবরে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার চাঙা হয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ যে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বাড়াচ্ছিল, সেই ধারায় এবার ছেদ পড়বে।

গত বছরের মার্চ থেকে ফেডারেল রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে। ফলে দেশটিতে নীতি সুদহার এখন ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত সমাজে অর্থের প্রবাহ হ্রাস করার জন্য নীতি সুদহার কমানো হয়, অর্থাৎ সমাজে অর্থের প্রবাহ কমলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে এবং পরিণামে চাহিদায় টান পড়বে। এতে জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে।

ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সম্প্রতি বলেছেন, মার্কিন অর্থনীতি মন্দা এড়াতে পারবে, অর্থাৎ বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাই না করেই মূল্যস্ফীতির হার কমানো যাবে।

ফেডারেল রিজার্ভের অর্থনীতিবিদেরা এক মাসের কর্মসংস্থানের উপাত্ত থেকে খুব বেশি কিছু ধারণা করতে চান না ঠিক; কিন্তু অক্টোবরের প্রতিবেদনে বোঝা যাচ্ছে, অর্থনীতি মন্দা এড়াতে পারবে। বেকারত্ব ৫০ বছরের মধ্যে প্রায় সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে, দুই বছর ধরেই তা ৪ শতাংশের নিচে। যদিও অর্থনীতিবিদেরা ধারণা করছিলেন, সাম্প্রতিক অতীতে দেশটিতে যে হারে কর্মসংস্থান হয়েছে, তার গতি কমে আসবে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড পলিসি রিসার্চের জ্যেষ্ঠ গবেষক ডিন বেকার দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ৪ শতাংশের কম বেকারত্বের হার থাকলে কোনো অর্থনীতি কর্মসংস্থানের এ হার ধরে রাখতে পারবে, তা বিশ্বাস করা কঠিন।

সম্প্রতি ফেডারেল রিজার্ভ ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ড উভয়েই জানিয়েছে, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হবে, তার ঠিক পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হলো। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি হ্রাসের কারণের ফেড ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২২ সালের জুনে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ, এখন যা বার্ষিক হিসাবে ৩ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। তা সত্ত্বেও ফেড সন্তুষ্ট নয়, তারা মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রায় নামিয়ে আনতে চায়।

ফেডের চেয়ারম্যান বলেছেন, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই এখনো চলছে। সে জন্য ভবিষ্যতে নীতি সুদহার আবারও বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু বেইলি বলেছেন, নীতি সুদহার কমানোর সময় হয়নি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মজুরি বৃদ্ধির হারও কমে এসেছে। অক্টোবরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঘণ্টাপ্রতি মজুরি বেড়েছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। মজুরি বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার ভবিষ্যতে ফেডের নীতি সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, মহামারি-উত্তর সময়ে উচ্চ হারে যেভাবে মজুরি বেড়েছে, তার সময় মনে হয় শেষ হয়ে এসেছে। শ্রমবাজারের চাঙাভাবে কিছুটা থিতিয়ে গেলেও ভোক্তাদের ব্যয় বৃদ্ধির ধারার সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.