রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের ঘটনায় বেচাকেনা করতে পারেননি আশপাশের ৪২টি বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরা। আগুন নেভানোর কাজের সুবিধার্থে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব বিপণিবিতান বন্ধ ছিল। তবে সন্ধ্যার দিকে কয়েকটি বিপণিবিতানের দোকান খোলার চেষ্টা করা হলেও এসব বিপণিবিতানের প্রবেশসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। তাতে রাজধানীর ‘মার্কেট হাব’ হিসেবে পরিচিত এ এলাকার বেশির ভাগ বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরা গতকাল শনিবার তেমন একটা ব্যবসা করতে পারেননি। এতে ঈদের আগে ভরা মৌসুমে এক দিনে কয়েক শ কোটি টাকার ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগুন নেভানোর সুবিধার্থে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সায়েন্স ল্যাব থেকে নীলক্ষেত ও বাটা সিগন্যাল থেকে গাউছিয়া পর্যন্ত পুরো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ কারণে এই এলাকার ৪২টি বিপণিবিতানের কয়েক হাজার দোকান বন্ধ রাখতে হয়। দেশের সবচেয়ে বড় খুচরা ব্যবসার এই কেন্দ্রের বিভিন্ন বিপণিবিতান ও দোকানে এক দিনেই কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। দিনের সেই বিক্রি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, একটি মার্কেটে আগুন লাগলেও অনেক মার্কেট বন্ধ রাখতে হয়েছে। তাতে এক দিনেই ব্যবসায়ীরা ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ঈদের আগে এ সময়ে প্রতিটি দিন ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার বড় সুযোগ। এমন এক সময়ে বিপণিবিতানে অগ্নিকাণ্ডের যে ঘটনা ঘটছে, তা ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। এ ক্ষতি পোষাতে অনেক বেগ পেতে হবে।
নিউমার্কেট এলাকার একাধিক বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা নিউমার্কেটে ৪৫০টির মতো দোকান আছে। অস্থায়ী দোকান মিলে এ সংখ্যা ৫০০। ঈদের আগে প্রতিটি দোকানে দিনে গড়ে লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। সেই হিসাবে গতকাল এক দিনেই নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা পাঁচ কোটি টাকার বেশি বেচাকেনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। গাউছিয়া ও চাঁদনী চক মার্কেটে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। এ দুই বিপণিবিতানে কাপড় ও জুয়েলারির স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ছোট-বড় দেড় থেকে দুই হাজার দোকান আছে সেখানে। ঈদের মৌসুমে এসব দোকানে দিনে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
চাঁদনী চক বণিক সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বিপণিবিতানে হাজারের বেশি দোকান রয়েছে। ঈদের এ সময়ে এসব দোকানে সব মিলিয়ে কমবেশি ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এ সময়ে ক্রেতার সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি থাকে। সেই ব্যবসা আগুনের ঘটনায় মার খেল গতকাল।
এদিকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেটে ছোট–বড় মিলিয়ে ১ হাজার ২০০টির বেশি দোকান আছে। যার একটি অংশ পুড়ে গেছে। ঠিক কত দোকান পুড়েছে বা ক্ষয়ক্ষতি কত, তার সঠিক তথ্য সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তবে এ সময়ে এসব দোকান এক দিন বন্ধ থাকা মানেই কমবেশি ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি।
এ ছাড়া নুরজাহান মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নেহার ভবন শপিং সেন্টার, গ্লোব সুপার মার্কেট, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, নূর ম্যানশন শপিং সেন্টার, ইসমাইল ম্যানশন মার্কেট, সুবাস্তু অ্যারোমা সেন্টার শপিং মল, ইস্টার্ন মল্লিকা ও চন্দ্রিমা মার্কেটের আরও তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার দোকান বন্ধ ছিল গতকাল দিনভর। বন্ধ ছিল নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলোও।
গতকাল ৪২টি বিপণিবিতানের কয়েক হাজার দোকান বন্ধ থাকায় ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। যদিও দোকান মালিক সমিতির দাবি, ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকার কম নয়। বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ব্যবসা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মনজুর আহমেদ বলেন, এ এলাকায় অন্তত পাঁচ হাজার দোকান আছে। আগুনের কারণে সবার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। দোকান খুলতে যত দেরি হবে, ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে।
এদিকে গত রাত নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই এলাকার সড়কগুলো বন্ধ ছিল। কিছু দোকান খুললেও ক্রেতা ছিল না। তবে আজ রোববার থেকে ব্যবসায়ীরা আবার নতুন করে ব্যবসা শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও আশা প্রকাশ করা হয়েছে, পোড়া মার্কেট ছাড়া অন্য সব মার্কেট রোববার খুলতে পারবে।