সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে– জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে– আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, আশা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষার মান উন্নয়নে যুগোপযোগী নীতিমালা
ফার্মাসি শিক্ষার মান উন্নয়নে যুগোপযোগী করা হয়েছে নীতিমালা। এতে ফার্মাসি বিভাগে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, রিয়েজেন্ট ও জনবলসহ আটটি ল্যাব স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য হাতেকলমে গবেষণায় সুযোগ তৈরি এবং রিসার্চ ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষাগারে কমপক্ষে ২৫ শিক্ষার্থী একত্রে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার উপযোগী ন্যূনতম ৫০০ বর্গফুট আয়তন থাকতে হবে। পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আলাদা কক্ষ থাকতে হবে। বাকি ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ আগস্টের মধ্যে পরিদর্শন শেষে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।
এর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগে ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দু’জন। বিষয়টি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও ল্যাব সহায়ক নিয়োগসহ চার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানান, শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ না থাকায় ফ্লোরে বসে তাদের ক্লাস করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এর আগে অনেকবার জানালেও শুধু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীদের সে দিনের মানববন্ধনের এক পর্যায়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য সেখানে গিয়ে সমস্যা সমাধানে আবারও আশ্বাস দেন। তবে এ আশ্বাস গত ১১ মাসেও কার্যকর হয়নি। এখনও শিক্ষক পাননি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
ফার্মাসি বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অর্ঘ্য প্রসূন সরকার জানান, বিভাগে পাঁচজন শিক্ষক ও দু’জন ল্যাব কর্মকর্তা প্রয়োজন। বর্তমানে মাত্র দু’জন শিক্ষক দিয়ে চারটি ব্যাচের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। রাতারাতি তো আর সম্ভব নয়। আগামী মাসের ২-৩ তারিখের দিকে শিক্ষক নিয়োগের চিন্তা করছি। সব চাহিদা একবারে পূরণ করতে পারব না। ল্যাবে তিনজনকে দায়িত্ব দিয়েছি। রাতারাতি চারটা ৫টা ল্যাব করা যাবে না। আমাদের সাধ্যের ভেতরে যতটুকু করার ততটুকু করব।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন, এটা ঠিক নিষেধাজ্ঞা নয়, তারা কিছু শর্ত দিয়েছিল। রুম বড় বড় লাগবে, কিছু ইকুইপমেন্ট থাকতে হবে। এসব সঠিকভাবে না হওয়ায় তারা ভর্তি আপাতত স্থগিত করেছে।
রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ফার্মাসি কাউন্সিলের অনুমোদন আছে। তারা কিছু শর্ত দিয়েছিল, শর্ত পূরণ করে কাউন্সিলকে জানাতে বলেছে। তা আমরা জানাব।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের রেজিস্ট্রার এ এফ এম আক্তারুজ্জামান কায়সার বলেন, ফার্মাসি কাউন্সিলর পরিদর্শন করে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে। আমরা চিঠি পেয়েছি। তারা কিছু বিষয়ে আমাদের গুরুত্ব দিতে বলেছে, আমরা সেসব বিষয়ে নজর দেব। আশা করছি ৩১ ডিসেম্বরের আগেই আমরা সেসব শর্ত পূরণ করতে পারব। তিনি আরও জানান, তারা প্রতি ব্যাচে ৮০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকেন। তাদের ফার্মাসি কাউন্সিলের এ বিষয়ে অনুমোদন রয়েছে।
ফার্মাসি কাউন্সিলের দেওয়া আলটিমেটাম সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার নূর আহমেদ বলেন, কাউন্সিল আমাদের অ্যাকাডেমিক কয়েকটি বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলোর প্রতিপালন করা হচ্ছে। তিনি জানান, তাদের প্রতি ব্যাচে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ফার্মাসি কাউন্সিলের অনুমোদন আছে। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, শিক্ষার্থী প্রতি ব্যাচে ৫০ জনের বেশি রয়েছে।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন বডি হিসেবে ফার্মাসি কাউন্সিলের পূরণীয় শর্ত প্রতিপালন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাধ্য। বিশ্বায়নের এই যুগে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে গেলে শিক্ষার মানের সঙ্গে আপস করার কোনোই সুযোগ নেই। পর্যাপ্ত ল্যাব, শিক্ষক, বই ছাড়া কখনও প্রকৃত জ্ঞানার্জন সম্ভব হবে না। ডিগ্রি প্রাপ্তির চেয়েও জ্ঞানার্জন ও দক্ষতা অর্জন জরুরি। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দেবে।