হাসপাতালের বৈকালিক সেবায় সন্তুষ্ট রোগীরা

0
190
হাসপাতালের বৈকালিক সেবা

দেশের ১২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু হলো বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা। এতে চিকিৎসকরা নির্ধারিত সময়ের পর নির্দিষ্ট ফি নিয়ে রোগী দেখছেন। তবে মন্ত্রণালয়ের হঠাৎ সিদ্ধান্ত প্রচারের অভাবে জনগণের মধ্যে তেমন সাড়া মেলেনি। এ ছাড়া অবকাঠামো ও জনবল এবং চিকিৎসক সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। প্রথম দিনে গড়ে ৫ জনের বেশি রোগী মেলেনি হাসপাতালে। তত্ত্বাবধায়করা বলছেন, স্বল্প সময়ে বড় প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। সম্পূর্ণরূপে সেবা চালু করতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। তবে নতুন এ সেবায় সন্তুষ্ট রোগীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সেবা উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং নিজ এলাকা মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে ১২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেবা পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হলো। পরবর্তী সময়ে সব হাসপাতালে এই সেবা চালু করা হবে। বিশালসংখ্যক চিকিৎসক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এই সুযোগ পাবেন। এতে সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হবে।

তবে কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া মৌখিক নির্দেশ ও আশ্বাসের ভিত্তিতে এই কার্যক্রম হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য সূত্রগুলো জানায়, নীতিমালায় অধ্যাপক পর্যায়ে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা; তাঁর সঙ্গে সহযোগী দু’জন পাবেন ৫০ টাকা করে। সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালট্যান্ট পাবেন ৩০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালট্যান্ট বা সমপর্যায়ের চিকিৎসকরা পাবেন ২০০ টাকা করে; যাঁদের সহযোগী দু’জন পাবেন ৫০ টাকা করে। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় ছোট অস্ত্রোপচারের জন্য ৮০০ টাকা, সিজারের ক্ষেত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা ফি ধরা হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীদের সার্জারি, ডায়াগনস্টিক, ক্লিনিক্যাল, প্যারা-ক্লিনিক্যাল টেস্ট ১৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় করা হয়েছে। একজন চিকিৎসককে সপ্তাহে দুই দিন তিন ঘণ্টা করে সেবা দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া এ সেবা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়, সেটি নিয়েও সংশয় রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, যেখানে অন্তত একজন কনসালট্যান্ট ও একটি এক্স-রে মেশিন সচল রয়েছে– এমন হাসপাতালেও কার্যক্রম চালু হয়েছে। তাই এই সেবা বেশি দিন চালু রাখা সম্ভব হবে না। তবে গতকাল বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম অস্ত্রোপচার হয়।

সেবার পরিস্থিতি জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বাহাউদ্দীন বলেন, খুবই অল্প সময় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রচারের অভাব ছিল। যে কারণ রোগী উপস্থিতি অনেক কম। আমাদের হাসপাতালে মাত্র ৬ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। আমরা প্রচারণা বাড়ানো উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে এ সেবা মানুষের সাড়া মিলবে।

রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা নিজেরা এ সেবা বিষয়ে জানতে পেরেছি ২৮ মার্চ। এক দিনের মধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আসলে নতুন সেবায় জনগণের অভ্যস্ত  হতেও সময় লাগবে। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম এ নাহিদ আল রাকিব বলেন, যেহেতু এটা নতুন একটি বিষয়। আমরা বুধবার নির্দেশনা পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে চেষ্টা করা হয়েছে প্রোগ্রামটি সফল করতে। প্রচারে মাইকিং করা হয়েছে। তবে উদ্বোধনের প্রথম দিনে রোগীদের উপস্থিতি কম হয়েছে। এ সেবা কার্যক্রম সম্পর্কে সবাই যখন জানতে পারবেন তখন সেবাপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়বে। এ ছাড়া অন্তত আরও ৬টি হাসপাতাল চিকিৎক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, একটি নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে। তবে অল্প টাকায় উন্নত সেবা মিলবে।

আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক সেবা পেয়ে খুশি আল আমিন, বীথি আক্তার, বর্ষা, হাসিনা, নাছরিন জাহানসহ অন্যরা। এখন ফি দিয়ে হলেও উপজেলা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাওয়া দারুণ উদ্যোগ। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বৈকালিক সেবা নিতে আসা সিঁথি খাতুন বলেন, সকালে হাসপাতালে এসে বৈকালিক সেবার কথা জানতে পেরে নির্ধারিত ফি দিয়ে পরামর্শ নিয়েছি। চিকিৎসক অনেক সময় নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলছেন। নারিকেলবাড়িয়া এলাকা থেকে সেবা নিতে আসা রজোদা খাতুন বলেন, বাইরে বেসরকারি ক্লিনিকে ৬০০ টাকা দিয়ে বড় ডাক্তার দেখাতে হতো, এখানে অল্প টাকায় সেই সেবা পাচ্ছি খুবই ভালো হলো এমন উদ্যোগে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক দাউদ আদনান বলেন, ১২টি জেলা সদর হাসপাতাল ও ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিছু ত্রুটি থাকলেও আশা করি দু-একদিনের মধ্যে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.