ব্যাংক-বীমার মুনাফার সঙ্গে লভ্যাংশ ঘোষণাও কমছে

0
104

গেল বছর ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা কোম্পানির নিট মুনাফা কমার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ কারণে লভ্যাংশ ঘোষণার হারও আগের বছরের তুলনায় কমেছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ ধরনের ১১৪টি কোম্পানির মধ্যে ৫৭টির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের সংক্ষেপ এবং লভ্যাংশ পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৫৭টি ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালে নিট ৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২১ সালে যার পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট মুনাফা কমেছে ৩৮ শতাংশের বেশি। মুনাফা কমার প্রভাবও দেখা যাচ্ছে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার হারে। গত বছর যেখানে ৫৭ কোম্পানি নগদ ও বোনাস মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকার লভ্যাংশ বিতরণ করে, এ বছর এসব কোম্পানি ৩ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা লভ্যাংশ আকারে বিতরণের ঘোষণা দিয়েছে।

ঘোষিত লভ্যাংশ পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, নগদ লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা সামান্য বাড়লেও কমেছে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার হার। ২০২১ সালের ২ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ বিতরণের বিপরীতে গত বছরের জন্য ২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ হারে বিতরণের সুপারিশ করেছে কোম্পানিগুলোর পর্ষদ। অর্থাৎ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে আগের বছরের জন্য ১ হাজার ১৭৩ কোটি টাকার বোনাস লভ্যাংশ বিতরণ করলেও ২০২২ সালের জন্য ৯৫৭ কোটি টাকার বোনাস লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। এ ক্ষেত্রে সাড়ে ১৮ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ কম। আর সার্বিকভাবে লভ্যাংশ ঘোষণা কমেছে ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ৩৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২২টি নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের সংক্ষেপ প্রকাশ এবং লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে। এসব ব্যাংকের নিট মুনাফা হয়েছে ৭ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ১১ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট মুনাফা কমেছে ৪ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা বা পৌনে ৪১ শতাংশ। এ মুনাফা থেকে এসব ব্যাংক ২ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা লভ্যাংশ আকারে বিতরণ করতে চায়। গত বছর তারা ৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা মুনাফা বিতরণ করেছিল। আজ বিকেলে পর্ষদ সভা শেষে বাকি ১৩ ব্যাংকের লভ্যাংশ সম্পর্কিত ঘোষণা আসার কথা রয়েছে।

এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ২৩ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র সাতটি মুনাফার তথ্য ও লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে। ২০২২ সালে এগুলোর নিট মুনাফা হয়েছে ৫১৩ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৬০৬ কোটি টাকা। তালিকাভুক্ত ৫৬ বীমা কোম্পানির মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২৭টি গত বছর ৪৪৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বলে জানিয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৪৮৪ কোটি টাকা।

এ পর্যন্ত ছয় কোম্পানি আগের বছরের তুলনায় বেশি লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে এবি ব্যাংক ৫ শতাংশ নগদসহ মোট ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে চায়। গত বছর এ হার ছিল ৫ শতাংশ। যমুনা ব্যাংক গত বছর সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এ বছর এ পরিমাণ নগদের সঙ্গে সাড়ে ৮ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশও দিতে চায়। তবে সিটি ব্যাংক নগদ ও বোনাস মিলিয়ে গত বছর ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিলেও এবার মাত্র ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ডাচ্‌-বাংলা ও ট্রাস্ট ব্যাংক গতবারের তুলনায় আড়াই শতাংশ কম লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে। সাউথবাংলার কমছে আধা শতাংশ। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, ইস্টার্ন, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল, আইএফআইসি, ইসলামী, মিডল্যান্ড, প্রাইম, পূবালী, শাহজালাল, সোস্যাল ইসলামী, ইউসিবি এবং উত্তরা ব্যাংক গতবারের সমান হারে লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.