স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরের বুকে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে বসবাস করছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। দ্বীপে ১ হাজার ৯৬০টি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার হতদরিদ্র-ভূমিহীন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দ্বীপের ৯০ শতাংশ মানুষ মূলত মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দ্বীপটি পর্যটকে সরগরম থাকে। তখন বিকল্প আয়ের সুযোগ হয় তাঁদের।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দ্বীপের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমপাড়ায় পলিথিনের ঝুপড়িঘরে বসবাস করছেন ৬৫ বছর বয়সী মোস্তফা খাতুন। তিনি জানান, ছয় বছর আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি এখন ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান। সংসারে তিন মেয়ে ও দুই নাতি রয়েছে।
মোস্তফা খাতুন বলেন, ‘এত মানুষ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছেন। আমাদের কি একটি ঘর দেওয়া যায় না?’
দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ায় ত্রিপলের ঝুপড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন নুর মোহাম্মদ (৬৭)। তিনি জানান, একসময় সাগরে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। বয়সের কারণে সাগরে মাছ ধরার মতো শক্তি তাঁর নেই। ছেলের ভ্যানগাড়ি চালানোর আয়ে কোনোমতে সংসার চলছে। গত পাঁচ বছরে ঘর মেরামত করতে পারেননি তিনি।
নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরের জন্য কত চেষ্টা–তদবির করেছি, কোনো লাভ হয়নি।’
অনন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি রক্ষায় যেভাবে সবাই ব্যর্থ হলো
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, সাগরে মাছ কমে আসায় দ্বীপের মানুষের অভাবে দিন কাটে। পর্যটন মৌসুমের বাইরে বিকল্প কোনো আয়ের ব্যবস্থা থাকে না। দ্বীপের বেশির ভাগ পরিবার হতদরিদ্র। তাঁদের জন্য উপহারের ঘর চেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সুফল মেলেনি। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বীপে স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ছাড়া সেন্ট মার্টিনে নির্মাণ খরচ বেশি হওয়ায় ঘর বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়।
![সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-03%2F134ca6db-4562-4141-8fa2-ef459dcd3d71%2FSaint_Martin_10.jpg?auto=format%2Ccompress)
গত বুধবার সারা দেশে হস্তান্তর করা ৩৯ হাজার ৩৬৫টি উপহারের ঘরের মধ্যে ১ হাজার ১৭১টি কক্সবাজারের। এর মধ্যে টেকনাফ উপজেলায় ছিল ১৪৩টি ঘর। এর আগেও তিন ধাপে টেকনাফে তিন ধাপে ঘর হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের জন্য এ পর্যন্ত কোনো উপহারের ঘর নির্মাণ করা হয়নি।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জমি কেনাবেচা কীভাবে
উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে ৮৫০ একর। সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমি ২০ একরের বেশি।
টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন হওয়ায় দ্বীপে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ ছাড়া টেকনাফের অন্য এলাকায় যে টাকায় ঘর তৈরি করা হচ্ছে, সেন্ট মার্টিনে করতে গেলে খরচ তার চেয়ে দ্বিগুণ লাগবে। তাই দ্বীপটিতে হতদরিদ্রদের পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, সেন্ট মার্টিনে হতদরিদ্র লোকের সংখ্যা অনেক, কিন্তু স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় উপহারের ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গত দুই দশকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অন্তত ২৩০টি হোটেল-রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এখনো নির্মাণাধীন ৩০টির বেশি স্থাপনা।