সাড়ে পাঁচ কোটি টাকায় মহাকাশ ভ্রমণ করলেন তিন যাত্রী

0
177
বিপুল অর্থের বিনিময়ে মহাকাশ ভ্রমণ করছেন ধনীরা।

ভার্জিন গ্যালাকটিকের প্রথম পর্যটকবাহী মহাকাশযান গত মঙ্গলবার মহাশূন্য থেকে ঘুরে এসেছে। এটি তাদের মহাশূন্যগামী প্রথম বিমান নয়, এর আগে জুন মাসে তারা আরেকটি বিমান পাঠিয়েছিল। তবে এবারই প্রথম টিকিট বিক্রি করে পর্যটক নিয়ে গেছে তারা, প্রতিটি টিকিটের দাম ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।

নিউ মেক্সিকোর স্পেসপোর্ট আমেরিকা নামের একটি ঘাঁটি থেকে গ্যালাকটিক ০২ নামের এই মহাকাশযানটি মহাশূন্যের উদ্দেশে উড়ান দেয়। দুজন পাইলট ছাড়াও বিমানটিতে আরও চারজন যাত্রী ছিলেন; যাঁদের একজন গ্যালাকটিকের নভোচারী বিভাগের প্রধান, বাকি তিনজন টিকিট কেটে এই ভ্রমণে যান।

এই তিন যাত্রীর মধ্যে একজন সাবেক ব্রিটিশ অলিম্পিক তারকা জন গুডউইন। বাকি দুজন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের নাগরিক—কেইশা স্কাহাফ ও অ্যানাসতাতিয়া মেয়ার্স। অর্থাৎ একসময় কল্পবিজ্ঞান গল্প বা চলচ্চিত্রের মতো মনে হলেও এবার বাস্তব রূপ পাচ্ছে মহাকাশ পর্যটন।

বিষয়টি হলো মহাকাশে যাওয়ার জন্য এখন শুধু অর্থ থাকলেই চলবে আর বিশেষ কিছুর প্রয়োজন নেই। কোম্পানিগুলো বিপুল অর্থ নিলেও ধনীদের এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। নতুন অভিজ্ঞতা নিতে তাঁরা ব্যয় করতে কার্পণ্য করছেন না।

ভার্জিনের এই মহাকাশযান যাত্রীদের নিয়ে ৮০ কিলোমিটার ওপরে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব অনুযায়ী, এটি মহাশূন্যের সীমানা। ৮০ কিলোমিটার ওপরে ওঠার পর মহাকাশযানটি আবার ঘাঁটিতে ফিরে আসে। এই অভিযানে যাত্রীরা কয়েক মিনিটের জন্য নিজেদের ভরশূন্য অনুভব করেন। তবে ইলন মাস্কের স্পেস এক্স কোম্পানির আয়োজনে যে মহাকাশ ভ্রমণ হয়েছিল, সেখানে যাত্রীরা এর চেয়ে বেশি সময় ভরশূন্য অনুভব করেছেন। সেই অভিযানের টিকিটের দাম অবশ্য এর চেয়ে অনেকটা বেশি ছিল।

ভার্জিনের মহাকাশ অভিযানের টিকিট বিক্রি শুরু হয় এক দশক আগে। তখন দুই থেকে আড়াই লাখ মার্কিন ডলারে এই টিকিট বিক্রি হয়। এরপর বছর দু-এক আগে ভার্জিন আবারও টিকিট বিক্রি শুরু করে; এবার তার দাম ওঠে সাড় চার লাখ ডলারে। ২০২২ সালে এই দামেই তিনজন টিকিট কিনেছেন।

এ ছাড়া স্পেসপোর্ট আমেরিকা নামের ঘাঁটিতে ঢুকতে ও বেরোতে আরও ৫০ হাজার ডলার দিতে হয়। তাতে সব মিলিয়ে এই চরম উত্তেজনাপূর্ণ ও রোমাঞ্চকর ভ্রমণে যেতে ব্যয় হয় পাঁচ লাখ ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৯ দশমিক ৫০ পয়সা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা।

এমন রোমাঞ্চকর ভ্রমণে ব্যয় করতে ধনীরা এখন খুব একটা কার্পণ্য করেন না। সম্প্রতি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে টাইটান ডুবোজাহাজে চড়ে যে পাঁচজন পর্যটক সমুদ্রের তলদেশে গিয়েছিলেন, তাঁদের মাথাপিছু খরচ হয়েছে আড়াই লাখ ডলার। সেই অভিযানের আয়োজক ছিল ওশানগেট নামের এক কোম্পানি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডুবোজাহাজটি সমুদ্রের তলদেশে বিস্ফোরিত হয় এবং সব অভিযাত্রী মারা যান।

সেই দুর্ঘটনার পর এ ধরনের রোমাঞ্চকর অভিযানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, বিশেষ করে ব্যয়ের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। কিন্তু ভার্জিন গ্যালাকটিক সূত্র সিএনবিসিকে জানিয়েছে, পাঁচ লাখ ডলার ব্যয় করে এ ধরনের অভিযানে যেতে চাওয়া মানুষের অভাব নেই। দেদার টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সম্প্রতি ধনীদের ব্যয়ের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। এখন তাঁরা দামি বস্তু কেনার চেয়ে নতুন অভিজ্ঞতা লাভে বেশি ব্যয় করতে ইচ্ছুক। এটাই তাঁদের রীতি। সে কারণে ধনীরা এখন ভ্রমণে বিপুল ব্যয় করছেন। এ ছাড়া মহাকাশ বা সমুদ্রের তলদেশ ভ্রমণের মতো চরম রোমাঞ্চকর ভ্রমণ হয়ে উঠছে ধনীদের ব্যয়ের নতুন খাত।

এ নিয়ে মোট সাতবার ভার্জিন গ্যালাকটিক মহাকাশ ভ্রমণ করেছে; চলতি বছরের মে মাস থেকে এ নিয়ে তিনবার। চাহিদা আছে বলেই তারা এখন প্রতি মাসে একটি করে উড়ান পরিচালনার চিন্তা করছে। শুধু তা-ই নয়, তারা ২০২৬ সাল থেকে প্রতি সপ্তাহে উড়ান পরিচালনার লক্ষ্যে ‘ডেলটা ক্লাস’ নামের একটি বহর গড়ে তুলছে।

গ্যালাকটিক ০২ আবার সাধারণ মহাকাশযানের মতো রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষিপ্ত হয়নি। একটি বড় পরিবহন বিমানের নিচে বাঁধা ছিল মহাকাশযান। সেটিকে নিয়ে ৪৫ হাজার ফুট বা তার বেশি উচ্চতায় উড়ে যায় সেই বিমান। এরপর মাঝ আকাশ থেকেই রকেট ইঞ্জিনচালিত ওই পর্যটন মহাকাশযানটিকে উৎক্ষেপ করা হয়। মুহূর্তের মধ্যেই বুলেট গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে চলে যায় ওই মহাকাশযান—৯০ মিনিটের মধ্যেই যা আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.