ঈদের বাকি আর দুই দিন। তবে ৩০ শতাংশ কারখানার শ্রমিক গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জুলাই মাসের বেতন পাননি। বোনাস পাননি ২০ শতাংশ কারখানার শ্রমিক। অন্যবারের মতো বেতন-ভাতা দেওয়ায় সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে না দেওয়ায় কারখানার মালিকেরা ইচ্ছেমতো দিচ্ছেন।
শ্রমিকনেতারা বলছেন, বড় কারখানাগুলো বেতন-ভাতা দিয়ে দিয়েছে। তবে ছোট-মাঝারি ও ঠিকায় বা সাবকন্ট্রাক্টিংয়ের কাজ করা বেশির ভাগ কারখানাই বেতন-ভাতা পরিশোধ করেনি। তারা আজ শুক্রবার ও শনিবার বেতন-ভাতা দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। ফলে অনেক শ্রমিকের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। তা ছাড়া বোনাসের পরিমাণ নিয়েও আছে বৈষম্য।
অবশ্য শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, ঈদুল আজহার আগে বেতন-ভাতা নিয়ে শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা নেই। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, তাদের সদস্য দুটি কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে। তবে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এদিকে গতকাল পর্যন্ত কত কারখানা বেতন–ভাতা পরিশোধ করেছে, তা নিয়ে একেক পক্ষ একেক রকম তথ্য দিয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয় গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, বিজিএমইএর সদস্য ৩ হাজার ৪০০ কারখানার মধ্যে ৯৫ শতাংশ গতকাল পর্যন্ত ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে। গতকাল, আজ ও কালকের মধ্যে বেতন পরিশোধ করবেন কারখানার মালিকেরা। এ ছাড়া বিকেএমইএর সদস্য ১ হাজার ৮৩ কারখানার মধ্যে ৮২ শতাংশ ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে। জুলাই মাসের বেতন দিয়েছে ৫০ শতাংশ কারখানা। কাল শনিবারের মধ্যে বাকি কারখানা বেতন–ভাতা দেবে।
এদিকে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক গতকাল সাংবাদিকদের জানান, ৭৮-৮০ শতাংশ কারখানা জুলাই মাসের বেতন এবং ৯৮ শতাংশ কারখানা বোনাস দিয়ে দিয়েছে। বাকিরা শনিবারের মধ্যে পরিশোধ করবে। ব্যাংক খোলা থাকায় সমস্যা হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে রুবানা হক বলেন, ‘বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন ১৩০টি কারখানা আমরা নজরদারিতে রেখেছিলাম। শেষ পর্যন্ত দুটি কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।’
শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঢাকা মহানগর ছাড়া আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ৩ হাজার ৮৪৬ পোশাক কারখানার মধ্যে গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত ৭০ দশমিক ৩ কারখানা শ্রমিকের জুলাই মাসের বেতন দিয়েছে। আর ঈদ বোনাস দিয়েছে ৭৯ দশমিক ৬১ শতাংশ পোশাক কারখানা। তার মানে, ৩০ শতাংশ কারখানার শ্রমিক বেতন এবং ২০ শতাংশ কারখানার শ্রমিক বোনাস পাননি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন শিল্প পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, আশুলিয়া অঞ্চলের পোশাক কারখানা বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে। গতকাল পর্যন্ত সেখানকার ৭৯১ কারখানার মধ্যে ৪৮৫টি বা ৬১ শতাংশ বেতন পরিশোধ করেছে। বোনাস দিয়েছে ৭০৬টি বা ৮৯ শতাংশ কারখানা। গাজীপুরের ১ হাজার ২৪২ কারখানার মধ্যে ৯০১টি বেতন ও ৯৭৮টি বোনাস দিয়েছে। চট্টগ্রামের ৬৯৭ কারখানার মধ্যে ৫০৬টি বেতন ও ৫৪৩টি বোনাস পরিশোধ করেছে। নারায়ণগঞ্জের ১ হাজার ৫৬ কারখানার মধ্যে ৭৬৪টি বেতন ও ৭৮৫টি বোনাস দিয়েছে। ময়মনসিংহের ৫৫ কারখানার মধ্যে ৪৩টি বেতন ও ৪৫টি বোনাস এবং খুলনা অঞ্চলের ৫ কারখানার সব কটি বেতন-ভাতা দিয়েছে।
রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কের জারা জিনসের পোশাকশ্রমিকেরা গত বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেতন-ভাতার দাবিতে মিরপুর সনি সিনেমার সামনের সড়কে অবস্থান করেন। গতকাল সকালেও তাঁরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিজিএমইএর হস্তক্ষেপে বেতন-ভাতা পরিশোধের উদ্যোগ নেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানাটিতে কাজ করেন সাড়ে সাত শ শ্রমিক।
গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমিন বলেন, বোনাসের টাকা বেলা তিনটার দিকে কারখানায় নিয়ে আসেন কারখানার প্রতিনিধিরা। তবে শ্রমিকেরা বেতন ছাড়া কেবল বোনাস নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে কারখানা প্রতিনিধিরা বেতনের টাকা নিয়ে আসেন।
এদিকে ঈদ বোনাসের পরিমাণ নিয়ে সরকারি নির্দেশনা না থাকায় শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকনেতা সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বড় কারখানাগুলো মূল মজুরির সমান হারে বোনাস দিচ্ছে। তবে ছোট-মাঝারি কারখানাগুলো ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বিদায় করছে। এই বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো দরকার।