
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এস এম মোস্তফা কামাল খানসহ ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল তুরস্কে যাচ্ছে লিফট কিনতে। ৯ মে এই সফরের নির্ধারিত দিন থাকলেও তারা ভ্রমণ পিছিয়ে আগামী ৬ জুন তুরস্কের উদ্দেশে যাত্রা করবে। সেখানে তারা ১০ দিন থাকবে। সফরের বিষয়টি সম্প্রতি চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক, যিনি নিজেও এই ভ্রমণকারীদের একজন।
লিফট কেনার কারণ দেখিয়ে তুরস্ক ভ্রমণের এমন আয়োজনের সমালোচনা করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, এ ধরনের ছোটখাটো কারণে বিদেশ ভ্রমণ বিলাসিতা এবং জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, দেশেই এখন লিফট সরবরাহের জন্য বড় বড় প্রতিষ্ঠান হয়েছে। ইন্টারনেটের সুবাদে দেশ-বিদেশের লিফট দেখা যায়। এ সময়ে এ ধরনের ভ্রমণ বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়। এটি অর্থের অপচয়ও বটে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য কিছুটা ভিন্ন। সহ-উপাচার্য এস এম মোস্তফা কামাল খান গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, মানুষ এখন একটি শার্ট কিনতে গেলেও বোতামটি উল্টিয়ে দেখেন। প্রকল্পটি চার বছর আগের। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই, আবার সরকারের সংশ্লিষ্টতাও নেই।
লিফট কিনতে যাঁরা তুরস্কে যাচ্ছেন, তাঁদের দলনেতা হলেন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এস এম মোস্তফা কামাল খান। উপদলনেতা হিসেবে থাকছেন কোষাধ্যক্ষ কে এম সালাহ উদ্দিন, সদস্যসচিব হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক জি এম আজিজুর রহমান। বাকি তিনজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ফরিদ আহমেদ, উপ–প্রকৌশলী মো. রিপন আলী ও জহির মোহাম্মদ জিয়াউল আবেদীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে একাডেমিক–আবাসিক হলসহ পাঁচটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ভবনগুলোর জন্য ২৫টি লিফট প্রয়োজন। আর এই লিফট কেনার নামেই এই ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) পাবনা জেলা কমিটির সভাপতি আবদুল মতীন খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের লিফট কেনার জন্য শিক্ষকদের বিদেশ ভ্রমণ মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। এটা স্পষ্ট অপচয়। ঠিকাদারের খরচে গেলেও এটাকে অপচয়ই বলব।’
সাংস্কৃতিক সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেলের সভাপতি সাজিদ সুজন বলেন, লিফট কেনার জন্য বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি পুরোটাই অযৌক্তিক। এই যুগে এমনটা মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কাজ আশা করা যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক জি এম আজিজুর রহমান বলেন, নিয়ম মেনেই এই সফর হচ্ছে। এতে সরকারি কোনো অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে না। সফরের এই অর্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বহন করবে।
উপাচার্য হাফিজা খাতুন বলেন, ‘সফরের বিষয়টা অনেক আগে থেকেই অনুমোদন করা আছে। সফরটি আরও আগে হওয়ার কথা ছিল। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সম্মান জানিয়ে বিলম্ব করেছি।’