লাইসেন্সধারী মদ্যপায়ীর তথ্য জানতে চায় পুলিশ

0
102
লাইসেন্সধারী মদ্যপায়ী

মাদক-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের আওতায় লাইসেন্সধারী অ্যালকোহলসেবীদের ব্যাপারেও জানতে চেয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এ-সংক্রান্ত একটি চিঠির বরাত দিয়ে বৈধ মদ ব্যবসায়ীদের কাছে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে মাদকদ্রব্য-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ না হয়েও ‘গোপনীয়’ বিবেচিত তথ্য জানতে চাওয়ায় এ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি তথ্যের অপব্যবহারের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।

এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২১ থেকে ৩০তম বৈঠকের বরাত দিয়ে তথ্য চাওয়া হলেও সভার কার্যবিবরণী যাচাই করে তেমন কিছু মেলেনি।

এ ব্যাপারে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের পর মন্তব্য করবে বলে জানান। বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মেজর (অব.) এম জাহাঙ্গীর হোসেইন বলেন, লাইসেন্সধারী মদ্যপায়ীদের বিষয়টি গোপনীয় হিসেবেই বিবেচিত। সেটিসহ আমাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে মৌখিকভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এর সব তথ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কাছে রয়েছে। তাই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, প্রয়োজনে তারা ডিএনসির কাছ থেকে তথ্য নিতে পারে।

এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার (স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) স্বাক্ষরিত ২৯ আগস্টের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতি জেলা/ইউনিটে লাইসেন্সধারী এবং লাইসেন্সবিহীন মদ ও মাদক কারবারিদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের নজরদারি ও নিরীক্ষণ করে এ-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। মাদক স্পট ও তার আশপাশের রাস্তাসহ অন্যান্য জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে।

চিঠিতে তথ্য সরবরাহের জন্য একটি ছক দেওয়া হয়েছে। সেখানে লাইসেন্সধারী মদ ক্রেতা/ভোক্তার সংখ্যা, লাইসেন্সধারী মদ বিক্রির দোকানের সংখ্যা, প্রতি মাসের কেনাবেচার হিসাব, লাইসেন্সধারী ও ভোক্তার সঙ্গে পরিমাণ সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা ইত্যাদি জানতে চাওয়া হয়েছে। আর মৌখিকভাবে জানতে চাওয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রে লাইসেন্সধারী ভোক্তার সংখ্যার সঙ্গে তাদের সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্যও জানতে চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর ধারা ৬১(১) অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদকাসক্ত ব্যক্তির তালিকা তৈরি করতে পারবে। অ্যালকোহল বিধিমালা ২০২২-এর বিধি ৭ অনুযায়ী লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ মদ এবং মাদক কেনাবেচার তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। অর্থাৎ লাইসেন্সধারী মদ ব্যবসায়ীদের থেকে মদ এবং মাদক-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের এখতিয়ার শুধু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের।

এমন পরিস্থিতিতে এসবি তথ্য চাওয়ায় বৈধ মদ ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছেন। বিষয়টির সুরাহা চেয়ে চিঠিও দিয়েছে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গত ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভার কার্যবিবরণীর ৯.৬ নম্বরে বলা হয়েছে, মাদক পাচারকারী, অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী, সকল রোহিঙ্গা এবং মাদকের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের তালিকা, শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়।

এর উল্লেখ করে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটির সভাপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, এ তালিকা বলতে জীবনঘাতী সব মাদক অপরাধীর তালিকা মর্মেই বোঝা যায়। এর সঙ্গে বৈধ অ্যালকোহল বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় ব্যবসায়ী বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত সামাজিক ক্লাব, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের বারগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও বারগুলোর কাছে নির্দিষ্ট ছকে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে স্পর্শকাতর এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কেনাবেচাসহ ভোক্তাদের তথ্য চাওয়ার বিষয়টি বোধগম্য নয়। সেই সঙ্গে বৈধ অ্যালকোহল ও এ জাতীয় পানীয় ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে ‘মাদক কারবারি’র মতো আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার না করার অনুরোধও জানান তারা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, লাইসেন্সপ্রাপ্ত বারে যারা পারমিট নিয়ে মদ পান করেন, তারা কেউ মাদকাসক্ত নন। তারা ধর্মীয়/সামাজিক রীতিনীতির কারণে বা শারীরিক প্রয়োজনে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে মদ পান করেন, যা আইন অনুযায়ী মাদকাসক্তি নয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ২০০২ সালের ১৬ জুন তারিখের এক চিঠিতে বলা হয়, মদ্যপান আমাদের সমাজে এখনও গোপনীয় ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে পারমিটধারী মদ্যপায়ীদের তালিকা কাউকে দেওয়া সমীচীন হবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.