বৃহত্তর রংপুর কেমন হবে আ’লীগ-জাপার আসন দখলের হিসাব

0
135

বৃহত্তর রংপুরের পাঁচ জেলায় ২২টি সংসদীয় আসনের সবক’টিই এক সময় ছিল জাতীয় পার্টির (জাপা) দখলে। সে কারণে রংপুরকে বলা হতো জাতীয় পার্টির ‘ঘাঁটি’। সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই, জাপার ঘাঁটিতে ঢুকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে বৃহত্তর রংপুরে জাপার দখলে মাত্র সাতটি আসন, বাকি সবক’টি আওয়ামী লীগের।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন দখলের হিসাবটা কোন দিকে যাবে, তা নিয়েই এখন আলোচনা। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী আশা করছেন, বৃহত্তর রংপুরের ২২টি সংসদীয় আসনের অধিকাংশ এবার তাদের দখলে চলে আসবে। এ লক্ষ্যে মাঠ গোছানো হয়ে গেছে বলে দাবি তাদের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জাপার নয়, রংপুর এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। হিসাব-নিকাশ করেই এবার দলের প্রার্থী ঠিক করা হবে, যাতে কোনো বিপত্তি না ঘটে।

গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া ২২ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়ে থাকেন চতুর্থ স্থানে। তাদের দু’জনের ভোটের ব্যবধান ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৯২।

স্থানীয় রাজনীতিকরা বলছেন, রংপুর সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা জামানত হারানোর পর আওয়ামী লীগে নতুন করে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কোন্দল নিরসনে। এ লক্ষ্যে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

রংপুর জেলায় ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দখলে এখন চারটি, বাকি দুটি জাতীয় পার্টির। এর মধ্যে রংপুর-৩ (সদর) আসনে এমপি জাপার প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ। অনেকে মনে করছেন, আসনটি এবার ‘কৌশলগত কারণে’ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেবে আওয়ামী লীগ। রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের এমপি জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও দল থেকে বহিষ্কৃত মসিউর রহমান রাঙ্গা। এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে এখানে রাঙ্গার পরিবর্তে অন্য প্রার্থী দেবে জাপা। সে ক্ষেত্রে রাঙ্গা কী করবেন– তা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের এমপি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনেকে মনে করেন, আসনটি এবার আওয়ামী লীগকে ছাড় দিতে পারে জাতীয় পার্টিকে। রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে বর্তমান এমপি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এ আসনে। রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনের এমপি আওয়ামী লীগের এইচ এন আশিকুর রহমান। জাতীয় পার্টি এ আসনটি ছাড়তে নারাজ। রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে এমপি আওয়ামী লীগের আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক। এর আগে এখানে ছিলেন জাতীয় পার্টির এমপি। জাপার স্থানীয় নেতারা জানান, তারা এবার আসনটি কাউকে ছাড়বেন না।

নীলফামারীর চারটি আসনের মধ্যে দুটি আওয়ামী লীগের ও দুটি জাতীয় পার্টির দখলে রয়েছে। আওয়ামী লীগের দখলে থাকা নীলফামারী-১ (ডোমার ও ডিমলা) ও নীলফামারী-২ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টির নেতারা মনোনয়নের দাবিতে এবার অনড়।

লালমনিরহাটে তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটি আওয়ামী লীগের ও একটি জাতীয় পার্টির দখলে আছে। এর মধ্যে লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতা। তাদের দাবি, আসনটি যেন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া না হয়।

গাইবান্ধায় পাঁচটি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে ফুলছড়িসহ চারটি আসন, বাকি আসনটিতে রয়েছেন জাতীয় পার্টির এমপি। এই পাঁচটি আসন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে ভাগাভাগি হতে পারে বলে দু’দলেরই অনেক নেতা মনে করেন।

কুড়িগ্রামে চারটি আসনের একটি জাতীয় পার্টির হাতে রয়েছে। বাকি তিনটি আওয়ামী লীগের দখলে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এবার কুড়িগ্রামের একটি আসনও ছাড় দিতে নারাজ। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এই জেলায় ভোটের সমীকরণ হবে ভিন্ন।

রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব হাজি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘রংপুরে জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসনই দখলে নেওয়ার লক্ষ্য থাকবে জাপার। আমরা সব আসন ফিরে পেতে চাই।’

অন্যদিকে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাসেম বলেন, ‘রংপুর এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এসব আসনে কারও ভাগ বসানোর সুযোগ নেই। আগামী যে কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এখানে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.