রাশিয়ার কাছ থেকে তেলা কেনা বৃদ্ধি করায় ওপেকের কাছ থেকে ভারতের তেলা কেনা কমেছে। ২০০৮ সালে ভারত ৮৭ শতাংশ তেল কিনত ওপেকের কাছ থেকে, ২০২২ সালে যা নেমে এসেছে ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশে। ভারতের তেল আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে রয়টার্স এ পরিসংখ্যান দিয়েছে। তা সত্ত্বেও গত বছর রাশিয়ার পর ভারতে শীর্ষ তেল সরবরাহকারী ছিল ইরাক ও সৌদি আরব।
মাসখানেক আগে সমুদ্রপথে পরিবহন করা রাশিয়ার তেলে মূল্যসীমা আরোপের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ঠিক সে সময়েই রাশিয়ার তেল আমদানি বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি।
রয়টার্স জানায়, বর্তমানে ইইউ–নির্ধারিত মূল্যসীমার চেয়েও অনেক কম দামে বা প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের নিচে রাশিয়ার তেল কেনা যাচ্ছে। ভারত সে সুযোগ লুফে নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ সে সুযোগ নিতে পারছে না। এতে দেশের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। বোঝা বাড়ছে ক্রেতাদের।
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে পশ্চিমারা রাশিয়ার তেলে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এতে বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়তে শুরু করে তেলের দাম। দীর্ঘ সাত বছর পর তা ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে তা ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলারে উঠে যায়; যদিও অল্প সময়ের জন্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের সব তেল আমদানিকারী দেশের আমদানি মূল্য বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় ডলারের বিনিময় হার। সৃষ্টি হয় ডলার-সংকট। কমে যায় রিজার্ভ, যে সমস্যা এখন অনেক দেশকেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
কিন্তু পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা না শুনে ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বৃদ্ধি করে। এতে তারা বড় ধরনের সংকট এড়াতে পেরেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাদের রিজার্ভ কমলেও শঙ্কিত হওয়ার মতো নয়, যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোর রিজার্ভ প্রতিনিয়তই কমছে। মূল্যস্ফীতিও মাথাচাড়া দিতে পারেনি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে জিজ্ঞাসা করা হয়, ভারত কেন পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রাশিয়ার তেল কিনছে? জবাবে তিনি যেসব উত্তর দিয়েছেন, তার সবই নেটিজেনদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে।
যেমন এস জয়শঙ্কর বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপ রাশিয়ার তেল কিনেছে ভারতের চেয়ে ছয় গুণ, তাহলে ভারত কেন কিনবে না? আবার তিনি বলেছেন, যাদের মাথাপিছু আয় ৬০ হাজার ডলার, তারাও জনগণের কথা চিন্তা করে রাশিয়ার তেল কিনছে; অথচ ভারতের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারের ওপরে, তাহলে ভারত কেন জনগণের কথা ভাববে না?
তবে জয়শঙ্করের সবচেয়ে সাহসী উত্তর হচ্ছে, ইউরোপ কেন মনে করে, তার সমস্যা অন্যদেরও সমস্যা হবে? অর্থাৎ এ যুদ্ধ রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকার সমস্যাপ্রসূত, এর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নেই।