মহামারি করোনার সময় মা ও তিন মেয়েকে আরবি শেখানোর সুবাদে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে গৃহশিক্ষক সাইদুল ইসলামের। নিহত ছাত্রী রাবেয়া আক্তারের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। একপর্যায়ে ‘মৌখিক বিয়ের’ নামে প্রতারণা করেন ওই গৃহশিক্ষক। পরে পরিবার ওই বিয়ে না মেনে নেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রী রাবেয়াকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গাজীপুরের সালনায় কলেজ ছাত্রী রাবেয়া আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা এবং নিহতের মা ও দুই বোনকে জখমের ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। র্যাব বুধবার রাতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকা থেকে সাইদুলকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার সাইদুলের বাড়ি মুক্তাগাছা ময়মনসিংহ। তিনি গাজীপুর সালনা এলাকায় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া একটি মসজিদের ইমামতিও করতেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুল জানান, ২০২০ সালে নিহত ছাত্রীর পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানো শুরু করেন গৃহশিক্ষক সাইদুল ইসলাম। এ সুবাদে তিনি প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগীর বাসায় যাতায়াত করতেন। ফলে ওই পরিবারের সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে সাইদুল নিহত ছাত্রী রাবেয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
র্যাব জানায়, ৫-৬ মাস পড়ানো বন্ধ করে দেয়। পরে সাইদুল প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিহত রাবেয়াকে মৌখিকভাবে বিবাহ করেন। সাইদুল বিষয়টি সামাজিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। বাধ্য হয়ে সাইদুলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় নিহত ছাত্রী। এ ঘটনায় ২০২২ সালের অক্টোবরে গাজীপুর সদর থানায় অভিযোগও করে ভুক্তভোগীর পরিবার।
র্যাব আরও জানায়, গত ২ মাস ধরে কলেজ এবং বাসার যাওয়া-আসার পথে রাবেয়াকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন এবং প্রস্তাবে রাজি না হলে হত্যার হুমকি দেন সাইদুল। একপর্যায়ে গৃহশিক্ষক জানতে পারেন রাবেয়াকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তার পরিবার। বিষয়টি সাইদুল কোনোভাবে মেনে নিতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ওই গৃহশিক্ষক।
যেভাবে হত্যা
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৭ মে স্থানীয় বাজারের একটি কামারের দোকানে ছুরি তৈরি করতে দেন গৃহশিক্ষক সাইদুল। পর দিন সন্ধ্যায় ছুরিসহ ছাত্রী বাসায় ঢোকেন গৃহশিক্ষক। কক্ষে ঢুকেই রাবেয়ার মাথায়, গলায়, হাতে এবং পায়ে ছুরিকাঘাত করেন তিনি। এ সময় ভুক্তভোগীর চিৎকারে তার মা ও দুই বোন তার ঘরে যান। তখন সাইদুল ছুরি দিয়ে তাদেরও এলোপাথাড়ি কুপিয় পালিয়ে যান।