মেরামত শেষ হয় না বেহাল মহাসড়কের অবস্থা

0
590
ঈদযাত্রা সামনে রেখে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। গতকাল দুপুরে।

এক সপ্তাহ পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। আজ মঙ্গলবার থেকে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা শুরু হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো সড়ক-মহাসড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। চলছে মেরামতের কাজ। অথচ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ ছিল ঈদের এক সপ্তাহ আগে সড়ক-মহাসড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত রাখতে হবে।

মন্ত্রীর নির্দেশনার পর সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর মহাসড়কের নাজুক অংশে মেরামত চালিয়েছে। কিন্তু মেরামত করার পরই ভারী যানবাহনের চাকার চাপে পুনরায় তা ভেঙে যাচ্ছে। এর ওপর পুনরায় মেরামত চলছে।

সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, মহাসড়কের যেসব অংশ বেশি বেহাল, সেখানকার বেশির ভাগই কোনো না কোনো প্রকল্পের অধীনে কাজ চলছে। ফলে জোড়াতালির মেরামত দিয়ে চালাতে হচ্ছে। প্রকল্প শেষ হলে হয়তো এই অবস্থা থাকবে না। ঈদের আগে আজ মঙ্গলবারই আনুষ্ঠানিকভাবে মেরামতের কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে গত কয়েক দিনে বেশির ভাগই ইট, বালু ও খোয়ার মেরামত হয়েছে। কিছু স্থানে পিচ ঢালা হয়েছে। ঈদযাত্রায় যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে এবং বৃষ্টি হলে আবারও মেরামতে নামতে হবে। তখন দুর্ভোগ ও যানজট—দুটোরই শঙ্কা আছে।

গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ঈদযাত্রা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি বলেন, সওজের লোকজনকে দিনরাত প্রস্তুত রাখতে হবে। অতিরিক্ত কাজ করে হলেও মেরামত করতে হবে। কারণ, জনগণ এমনিতেই একটা আতঙ্ক নিয়ে দেশের বাড়িতে যাচ্ছেন। সড়ক চলাচলের জন্য উপযোগী না হলে দুর্ভোগটা আরও বাড়বে।

গত ২৭ জুলাই  দেশের মহাসড়কের অবস্থা নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর মহাসড়কে মেরামতও হয়েছে। গতকাল এসব সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ঘুরে দেখেছেন প্রতিনিধিরা।

ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক

বঙ্গবন্ধু সেতু পেরিয়ে নলকা সেতুতে গত ঈদুল ফিতরেও যানজট হয়েছে। গতকাল সেতুর সম্প্রসারণশীল সংযোগে (এক্সপানশন জয়েন্ট) মেরামত চলছিল। যানবাহন চলাচল করছে একাংশ দিয়ে। এতে সেতুর দুই পারেই যানজট দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত অসংখ্য গর্ত ছিল। গত কয়েক দিনে এর কিছু কিছু মেরামত হয়েছে। তবে এখনো স্থানে স্থানে গর্ত দেখা গেছে। এই অংশের ঘুরখা থেকে রয়াহাটা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পথে পিচ নেই, ইট বিছানো। ফলে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।

আজ থেকে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা শুরু হচ্ছে
এখনো সড়ক-মহাসড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি
সড়ক উপযোগী না হলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে

সওজ সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, নলকা ও ধোপাকান্দি সেতু দুটি সরু হওয়ায় যানবাহনের চাপ বেশি হলে জট লেগে যায়। এর বাইরে মহাসড়কের যেখানে যেখানে গর্ত ছিল, সবই মেরামত করা হয়েছে।

মহাসড়কের বগুড়া অংশের ৬৫ কিলোমিটার অংশে ব্যাপক খানাখন্দ ছিল। গত কয়েক দিনে মেরামতে কিছু স্থান চলাচলের উপযোগী হয়েছে। তবে এখনো প্রায় ১৭ কিলোমিটার পথে খানাখন্দ আছে। বিশেষ করে বগুড়ার গোকুল বাজার থেকে মহাস্থানগড় করতোয়া সেতু পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে ইট বিছিয়ে মেরামত করা হয়েছে। সড়কের এক লেন বন্ধ করে চলছে সংস্কারকাজ। এ ছাড়া মহাস্থানগড়ে মহাসড়ক ঘেঁষে সপ্তাহে শনি ও বুধবার কোরবানির পশুর হাট বসছে। জোড়াতালির মেরামত এবং পশুর হাট—এই দুই মিলে ঈদযাত্রা কতটা নিরবচ্ছিন্ন হয়, সেই শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

মহাসড়কের গাইবান্ধা অংশ গত বছর বড় মেরামত করা হয়েছে। ফলে এখনো মোটামুটি ভালো আছে। তবে সাদুল্যাপুরের ধাপেরহাট বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার পিচ উঠে গেছে। আছে খানাখন্দও।

ঢাকা-খুলনা

এই মহাসড়কটি পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ভালোই আছে। টুকটাক মেরামতেই সেরে যাচ্ছে। দৌলতদিয়া ঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পথ এখনো খারাপই আছে। কোথাও কোথাও পাথর ও খোয়া বেরিয়ে এসেছে। আছে কিছু গর্তও।

 যশোরের পালবাড়ি থেকে অভয়নগরের রাজঘাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার মহাসড়ক পুনর্নির্মাণ চলছে। এর মধ্যে ১৪ কিলোমিটার পিচের ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাকিটা এখনো ইট-বালু-পাথরের সড়কই আছে। ফলে বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগ হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সড়কের সাত-আট স্থানে সাইনবোর্ড টানানো। এতে লেখা রয়েছে—‘যশোর-খুলনা মহাসড়কের উন্নয়নমূলক কাজ চলমান। সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

বাসচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মহাসড়কের এই অংশে সর্বত্রই খোয়া-বালু-পাথরের ছড়াছড়ি। বৃষ্টিতে পানি জমে যায়। আর অন্য সময় ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়।

ঢাকা-ময়মনসিংহ 

এই মহাসড়কের টঙ্গী সেতু থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ এখনো নাজুক। এই অংশে বাসের বিশেষ লেন (বিআরটি) ও সড়কের পাশে নালা নির্মাণের কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। প্রতিদিনই মেরামত হয়। আবার বৃষ্টির পানি নালা উপচে সড়কে উঠে তা ধুয়ে নেয়। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। টঙ্গী স্টেশন রোডের পর এক-দেড় কিলোমিটার ভালো। তবে চেরাগ আলী এলাকা থেকেই দুর্ভোগের শুরু। নালার পানি উপচে পড়ার পাশাপাশি সড়কেও খানাখন্দও আছে। ভেকু দিয়ে গতকাল পানি সরাতে দেখা গেছে। চেরাগ আলী পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশনের সামনে বেশ পানি জমে থাকতে দেখা যায়। ফলে যানবাহন চলাচল করছে একটি লেন ধরে। চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত একই অবস্থা। এ ছাড়া এবার গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষে কোরবানির পশুর হাট বসছে। এতে দুর্ভোগের শঙ্কা থাকছেই।

সওজ গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফ উদ্দিন বলেন, মহাসড়কের এই অংশ বিআরটি প্রকল্পের অধীনে। তাই তাঁদের খুব বেশি কিছু করার নেই। এরপরও তাঁরা প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছেন। বৃষ্টি হলে সমস্যা হতে পারে।

ঢাকা-সিলেট

এই মহাসড়কটি ২০০৫ সালের পর বড় ধরনের মেরামত হয়নি। ফলে স্থানে স্থানে খানাখন্দ আছে। কোথাও ১০০ মিটার, কোথাও কোথাও এক কিলোমিটার বা তার কিছু বেশি অংশজুড়ে বেহাল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ শেষ হয়নি। সেতুর সংযোগ সড়ক এখনো পিচের ঢালাই করা হয়নি। কোথাও মাটি, কোথাও খোয়া-বালুর পথ। ফলে যান চলাচল করছে বেশ ধীরগতিতে।

হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটের ১২টি স্থানে খানাখন্দ ছিল। আট-দশ দিন ধরে এসব স্থানে মেরামত হয়েছে। তবে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের দেবপাড়া, আবদানাড়াইল, মিরপুর এলাকায় ইট-বালুর মেরামত উঠে যেতে দেখা গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.