মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ তিন শিশুর মধ্যে একজনের লাশ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সুবচনী এলাকায় লাশটি ভেসে ওঠে। পরে মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা লাশটি উদ্ধার করেন।
মারা যাওয়া শিশুর নাম তুরান (৮)। সে সিরাজদিখান উপজেলার লতাব্দি ইউনিয়নের কয়ড়াখোলা এলাকার সিঙ্গাপুরপ্রবাসী আরিফ হোসেনের ছেলে। এ নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় আটজনের মৃতদেহ উদ্ধার হলো। এখনো নিখোঁজ আছে তুরানের ছোট বোন নাভা (৫) এবং একই ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামের রুবেল শেখের ছেলে মাহির (১১)।
মুন্সিগঞ্জে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনায় অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলা
মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ, নৌ পুলিশ উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আসছে। নিখোঁজ তিন শিশুর সন্ধানে গতকাল রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলে। আজ ভোর থেকে আবার উদ্ধার অভিযান চলছিল। ঘটনাস্থলের দুই কিলোমিটার দূরে সুবচনী এলাকায় তুরানের লাশটি ভেসে ওঠে। নৌ পুলিশ লাশটি উদ্ধার করেছে। পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
গত শনিবার রাতে একই দুর্ঘটনায় সিরাজদিখান উপজেলার লতাব্দি ইউনিয়নের খিদিরপুর এলাকার মো. শাহজাহানের স্ত্রী মোকছেদা বেগম (৪০), একই এলাকার আফসার উদ্দিনের স্ত্রী এপি আক্তার (২৮), তার বড় বোন পপি আক্তার (৩০), পপির দুই ছেলে সাকিবুল (১০), সজীবুল (৪), একই এলাকার মো. শাহাদাতের মেয়ে হুমায়রা (৫ মাস), ফিরোজ সরকারের ছেলে ফারিয়ানের (৮) লাশ উদ্ধার করা হয়।
শনিবার সকালে লতাব্দি ইউনিয়নের নারী–শিশুসহ ৪৬ ব্যক্তি ট্রলারে করে পদ্মা নদীতে ভ্রমণে যান। পিকনিক শেষে ট্রলারটি তালতলা-গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে লতাব্দির দিকে যাচ্ছিল। রাত আটটার দিকে ট্রলারটি লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় পৌঁছালে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি তলিয়ে যায়। শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অবশ্য প্রথমে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আটজনের লাশ উদ্ধারের কথা বলা হয়েছিল। তবে পরে সাতজনের লাশ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
তুরান–নাভার অপেক্ষায় খালপাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন দাদা নুরুল ইসলাম
তুরানের দাদা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় মানুষজন আমাদের খবর দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, যে লাশটি ভেসে উঠেছে, সেটি লাল গেঞ্জি ও জিনসের প্যান্ট পরা। এতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এটা তুরানের লাশ। আমরা এখন লাশ আনতে যাচ্ছি।’
ট্রলার ডুবে হতাহতের ঘটনায় গতকাল বিকেলে পাঁচজনকে আসামি করে লৌহজং থানায় মামলা করেন ছেলে, দুই বোন, দুই ভাগনে হারানো রুবেল শেখ। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় বাল্কহেডের মালিক, চালক, চালকের সহকারীসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
এ ব্যাপারে লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, মামলাটি মাওয়া নৌ পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।