বড় হয়েছেন রক্ষণশীল পরিবারে। অভিনয়ের কথা কখনোই ভাবেননি। ২০১৯ সালে পড়াশোনা করতে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমিস্টার শেষে এক অবসরে ফেসবুকে ঢুঁ মারছিলেন। হঠাৎ চোখ আটকে যায় এক পোস্টে—এক পরিচালক নতুন মুখ খুঁজছেন। এভাবেই ওই পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ। সাদিয়া আয়মানের শুরুর গল্পটা এখানেই শেষ নয়। কারণ, মূল ঝামেলার সূত্রপাত এরপরেই।
মেয়ে অভিনয় করবে! মা–বাবা মেনেই নিতে পারছিলেন না। কথা বলাই বন্ধ করে দেন। তবু দমে যাননি সাদিয়া। মা–বাবাকে ভরসা দিয়েছিলেন—একদিন মেয়ের জন্য তাঁরা গর্ব করবেন। বিশ্বাস ছিল, ভালো কিছু করে চমকে দিতে পারবেন মা–বাবাকে। সেই দিনটির জন্য বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি সাদিয়া আয়মানকে।
প্রথম নাটকের পর বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন। সেখান থেকে বড় একটি কোম্পানির কর্মকর্তা সাদিয়াকে শুভেচ্ছাদূত করতে তাঁর বাবাকে ফোন করেন। সাদিয়ার কাজের ভূয়সী প্রশংসাও করেন। সেদিন বাবা অনেক খুশি হন। তাঁরা বুঝতে পারেন, মেয়ে ভালো কিছু করছে। খুশি আর আবেগে কান্নার মিশেলে সেদিন অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়েছিল এই তরুণ অভিনেত্রীর।
ক্যারিয়ার বেশি দিনের না হলেও অল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করেছেন সাদিয়া। এই সময়ে ছোট পর্দার ব্যস্ততম অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন তিনি। রোমান্টিক, শান্ত, ভদ্র, নরম চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেশি ডাক পড়ে। তবে যে রোমান্টিক চরিত্রে তাঁর চাহিদা সবচেয়ে বেশি সেই ধরনের চরিত্রে অভিনয় সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করেন এই অভিনেত্রী।
শুরুর দিকে তাকে এ ধরনের চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে সাদিয়াকে। রোমান্টিক ভঙ্গিতে কথা বলতে তাঁর কষ্ট হতো, লজ্জাও লাগত। একপর্যায়ে ভাবতে শুরু করেন, তাঁকে দিয়ে রোমান্স হবে না। তবে সেই সাদিয়াই এখন রোমান্টিক নাটকের নিয়মিত মুখ। একই ধাঁচের গল্পে অভিনয় করলেও নিজেকে আলাদা করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে গেছেন তিনি।
তবে পরিচালকেরা এখন ভিন্নধর্মী চরিত্রেও তাঁকে ভাবছেন। সাদিয়ার নিজের পছন্দ নারীপ্রধান চরিত্রে কাজ। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়ার প্রথমে ইচ্ছা ছিল আইনজীবী হবেন। কিন্তু হুট করেই অভিনয়ে চলে আসা। গত বছর ওয়েব ফিল্ম ‘মায়াশালিক’ প্রচারের পর রাতারাতি পরিচিতি পান। ছোট পর্দার নির্মাতারা তাঁকে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
গত ঈদুল আজহায় নয়টি নাটকে দেখা গেছে সাদিয়া আয়মানকে। ট্রেন্ডিংয়ে থাকা অন্য নাটকের তুলনায় কোনোটিরই সেভাবে ভিউ নেই। তবে ভিউ নিয়ে চিন্তিত নন সাদিয়া, ‘হয়তো ভিউ অত নেই, কিন্তু নাটকগুলো পরিবারের সবাই মিলে দেখতে পারবে। নাটকগুলোতে সেই মানসম্মত উপাদান রয়েছে। আমি কাজ নিয়ে দর্শকদের মন্তব্যগুলো দেখি। আমার নাটক নিয়ে মন্তব্যগুলো দেখবেন, সবাই প্রশংসা করেছেন। এটাই আমার অর্জন।’ চিত্রনাট্য নির্বাচনের সময় গল্পটা কতটা শক্তিশালী, কী বার্তা দিচ্ছে, সেটা মাথায় রাখেন এই তরুণ অভিনেত্রী। অনেক সময় দেখা যায়, গল্প ভালো কিন্তু সংলাপ মনের মতো হয়নি। তখন আলোচনার মাধ্যমে সংলাপে বদল আনেন। এভাবেই ভালো কাজ দিয়ে দর্শকের কাছে পৌঁছাতে চান সাদিয়া।
ঈদে অভিনেত্রীর উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘আজ আকাশে চাঁদ নেই’। এই নাটকটা অভিনেত্রীর বেশ পছন্দের। প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় বেশ কয়েকবার এই নাটকের নাম বলছিলেন তিনি। নাটকটি কেন তাঁর পছন্দের, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নব্বই দশকের নাটকগুলো যাঁরা মিস করেন, তাঁরা “আজ আকাশে চাঁদ নেই” নাটকে সেই সময়ের ফিল পাবেন। এটি নির্মিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের নাটকের আদলে। নাটকটি দেখে অনেক দর্শকই মন্তব্য করেছেন, হুমায়ূন-জাদু ফিরে এসেছে।’ ইউটিউবে নাটকের মন্তব্যের ঘরেও দর্শকও তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় হুমায়ূন আহমেদের কথা লিখেছিলেন। সাদিয়া বলেন, ‘আমরা কাউকে বলিনি এটা হুমায়ূন আহমেদের নাটকের আদলে নির্মিত। দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝলাম দর্শকেরও সেই অনুভূতিটা হয়েছে।’
ঈদের নাটকের আলোচিত জুটির মধ্যে অন্যতম খায়রুল বাসার ও সাদিয়া আয়মান। দর্শকেরও পছন্দের জুটি হয়ে উঠছেন তাঁরা। এই ঈদে তাঁদের আলোচিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সুখ অসুখ’। ভালোবাসা যে একটা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকেও সুস্থ করে দিতে পারে, এমন গল্পে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। প্রতিটি অভিনয়শিল্পী তাঁদের সর্বোচ্চটা দেওয়ায় নাটকটি ভিন্নমাত্রা পেয়েছে, মনে করেন সাদিয়া।
ঈদে নারী পাচারের সত্য ঘটনা অবলম্বনে স্বপ্নভুক নামের ওয়েব ফিল্মেও অভিনয় করেছেন সাদিয়া আয়মান। তিনি দেখিয়েছেন, রোমান্টিক ধাঁচের বাইরে গিয়েও অভিনয় করতে পারেন। ভিন্ন ঘরানার চরিত্রে দর্শকও তাকে পছন্দ করেছে। আরটিভির পর্দায় ঈদের দিন ওয়েব ফিল্মটির প্রিমিয়ার হয়। টেলিভিশন, ওটিটির পর সাদিয়া এখন বড় পর্দায় অভিষেকের অপেক্ষায়। তাঁকে দেখা যাবে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’য়। সামনে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে একটি অ্যান্থলজি সিরিজে দেখা যাবে তাঁকে। সেখানে তাঁর লুক ও চরিত্র ভক্তদের চমকে দেবে, মনে করেন সাদিয়া।