গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ফলাফলে নান্দাইল উপজেলার মিশ্রিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সাতজন বৃত্তি পায়। এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে পায় ছয়জন এবং সাধারণ গ্রেডে পায় একজন শিক্ষার্থী। কিন্তু ফলাফল তৈরিতে ত্রুটির কারণে আগের ফলাফল স্থগিত করা হয়। এরপর ১ মার্চ প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় তাদের একজনও বৃত্তি পায়নি। এ কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে এই শিশু শিক্ষার্থীরা।
একইভাবে প্রথমবার ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় নান্দাইল রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী রানিশা। এই খুশিতে প্রতিবেশীদের মিষ্টিও খাওয়ান তাঁর বাবা রহুল আমীন ও মা গুলনাহার আক্তার। কিন্তু একদিন পরই হতাশা নেমে আসে পরিবারটিতে।
কারণ দ্বিতীয়বার প্রকাশিত ফলাফলে বৃত্তি পায়নি রানিশা।
রানিশার বাবা জানান, তাঁদের বাড়ি নেত্রকোনায়। তবে বর্তমানে নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল চৌরাস্তা বাণিজ্যিক এলাকায় থাকেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘তাঁর মেয়ে রানিশা মেধাবী ছাত্রী। তাঁরা ভেবেছিলেন মেয়েটি লেখাপড়ায় প্রথমবার একটি স্বীকৃতি পেল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানে সে আনন্দ ধুলায় মিশে গেল। ট্যালেন্টপুল থেকে একেবারে না পাওয়ার বেদনায় রানিশা বিষণ্ন হয়ে গেছে।’
মিশ্রিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না মোদকের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার সকালে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে রাগান্বিত হয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। শিক্ষার্থীরা তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে। তিনি (প্রধান শিক্ষিকা) তাঁদের সান্ত্বনা দিয়ে কোনোমতে বাড়ি পাঠান।
চণ্ডীপাশা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা জানান, তাঁদের সন্তানরা প্রথম ফলাফলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত ফলাফলে তাদের নাম নেই। এই শিশুদের এমন মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে ফেলার কী দরকার ছিল? এই প্রশ্ন অভিভাবক লামিয়া ও আনারকলির।
হেমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হোসনে আরা খানমের দাবি, যোগ্য হওয়ার পরও প্রথমবার প্রকাশিত ফলাফলে তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী বৃত্তি পায়নি। তবে গত ১ মার্চ প্রকাশিত ফলাফলে দু’জন ট্যালেন্টপুলে এবং একজন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা বলেন, সংশোধিত ফলাফলে সন্তানদের রোল নম্বর না থাকার ঘটনায় তাঁদেরকেই (শিক্ষকদের) দায়ী করছেন অভিভাবকরা। নানাভাবে বোঝালেও বিষয়টি বুঝতে চাইছেন না তাঁরা।
জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলাতুন্নেছা বলেন, প্রথম প্রকাশিত তালিকায় ত্রুটি ছিল বলেই সংশোধন করা হয়েছে। এতে কেউ কেউ বাদ পড়েছে আবার কেউ কেউ পেয়েছে। কিন্তু এতে করার কিছুই নেই। তারপরও পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ রয়েছে। ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করতে পারবে তারা।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সংশোধিত ফলাফলে নান্দাইল উপজেলায় ৯২ জন ট্যালেন্টপুল এবং ১৩৩ জন সাধারণ গ্রেড পেয়েছে।