এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. রাকিব শনিবার দুপুরে বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে দোয়া চেয়েছিল। সন্ধ্যায় তার বাবার মৃত্যুর খবরে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। তবে বাড়িতে বাবার লাশ রেখে রোববার চোখের পানি মুছতে মুছতে পরীক্ষা দিয়েছে সে।
একই সময়ে চার দিন বয়সের শিশু নিয়ে কেন্দ্রে আসে সাদিয়া খাতুন। সঙ্গে ছিল শিশুর ফুফু। ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকুপা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের। তবে সাদিয়া কিংবা রাকিবের মতো পরীক্ষা দেওয়া হয়নি বরিশালের বানারীপাড়ার সাইমুনের। তিন দিন আগে দুর্ঘটনায় ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি সে।
বাবা হারানো রাকিবের বাড়ি দশমিনা উপজেলার নেহালগঞ্জ গ্রামে। সে নেহালগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার বাবা ইব্রাহীম সরদার বান্দরবানে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন। শনিবার সন্ধ্যায় সেখানে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। রোববার সকালে মরদেহ নেহালগঞ্জে আনা হয়। বাবার লাশ বাড়িতে রেখেই রাকিব দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসে।
পরীক্ষা চলাকালে কান্নায় ভেঙে পড়ে রাকিব। সে বলছিল, ‘বাবা আর কখনোই আদর করে ডাকবে না। তাঁর স্বপ্ন ছিল- আমি অনেক বড় হবো। তাই আমি পরীক্ষা দিতে এসেছি। কিন্তু বাবার এভাবে চলে যাওয়া ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে।’
রাকিবের অশ্রুসজল চোখ দেখে হৃদয় ছুঁয়ে যায় অন্যদেরও। তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনির হোসেন বলেন, সে পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী। কেন্দ্র সচিব মো. সালাউদ্দিন সৈকত বলেন, মনে কষ্ট চেপে সে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। সে অনেক বড় হোক। তার প্রতি শুভ কামনা।
মামা ইমাম হোসেন বলেন, রাকিবকে সকালে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে তার বাবার লাশ দাফন করার কথা জানান তিনি।
শৈলকুপায় চার দিনের সন্তান নিয়ে সাদিয়া পরীক্ষা দিতে আসে সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সে আউশিয়া আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী।
শৈলকুপা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মহিদুল ইসলাম বলেন, নিয়ম মেনে শিশুটির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। তাকে কয়েকবার মায়ের দুধ পানের ব্যবস্থা করা হয়। তবে বিষয়টি অবগত নন বলে জানান কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজিয়া আক্তার চৌধুরী।
বানারীপাড়ায় হাতের কবজি হারানো সাইমুন পরীক্ষার হলের পরিবর্তে ঢাকার একটি হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছিল। সৈয়দকাঠি ইউনিয়ন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী সে। মেয়ের চিকিৎসার ব্যয় কীভাবে বহন করবেন, সে চিন্তায় দিশেহারা মাটি কাটা শ্রমিক সাইদুল ইসলাম। তার চিকিৎসার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়ছেন।
জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল সাইমুন খালা ঝুমুরকে নিয়ে আউয়ার বাজার থেকে ব্যাটারিচালিত অটোবাইকে বাইশারী বাজারে হোমিও চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিল। পথে অটোবাইকে ওড়না জড়িয়ে গেলে সে ডান হাত দিয়ে টেনে আনার চেষ্টা করে। এ সময় তার হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঢাকায় অস্ত্রোপচার হলেও হাতের কবজি যুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
সৈয়দকাঠি ইউনিয়ন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কমল কাান্তি বিশ্বাস বলেন, সাইমুনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সহপাঠী, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সবাই মর্মাহত। রাইটারের মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও গুরুতর অবস্থার কারণে সম্ভব হয়নি। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন।