বাঁধে ভাঙন, চরে আতঙ্ক

0
157
তিস্তা নদীর বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তীরবর্তী বাসিন্দারা। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিনবিনা এলাকায়

বাঁধ ভেঙে গেলে বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হবে। আবাদি জমি, বসতভিটা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নে তিস্তা নদীর পানি বাড়া-কমায় ওই এলাকায় নির্মিত মাটির বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকার ওই বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় চরবাসী দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বাঁধটি ভেঙে গেলে বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। সেই সঙ্গে মানুষের আবাদি জমি, বসতভিটা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

গতকাল সোমবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিনে নদীর পানি বাড়ছে, আবার কমছে। এভাবে বাড়া-কমার ফলে নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর বন্যার আগে উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নে স্থানীয় জনগণের উদ্যোগে বাঁধটি নির্মিত হয়। বাঁধটির দৈর্ঘ্য এক হাজার ফুট, প্রস্থ ৩০ ফুট। এর মধ্যে বাঁধের প্রায় ১০০ ফুট এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এলাকাভেদে ৩০ ফুট প্রস্থের মধ্যে ১০ থেকে ১২ ফুট ইতিমধ্যে ভেঙে গেছে। ভাঙনকবলিত বাঁধের অংশে দেওয়ার জন্য ২ হাজার ৪০০ বালুর বস্তা প্রস্তুত আছে। কিছু এলাকায় বালুর বস্তা ফেলাও রয়েছে।

বাঁধ রক্ষায় ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার বালুর বস্তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রবিউল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী, রংপুর পাউবো

গত কয়েক বছরের বন্যায় বিনবিনা এলাকার মকবুল হোসেনের দুই একরের বেশি জমি নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে। এখন তাঁর বসতভিটাসহ আবাদি জমি রয়েছে দেড় একর। বাঁধটি ভেঙে গেলে পুরোটাই নদীতে হারিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষাকালে নদীর ভাঙন নিয়া চিন্তা থাকে। কত কষ্ট করি গ্রামের মানুষ এই এলাকাত মাটির বাঁধ করনো। এই বছরে সেই বাঁধ ভাঙনের মুখে আছে।’

শাহজাহান আলীর গত কয়েক বছরে দুই একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন রয়েছে বসতভিটা আর মাত্র ১২ শতাংশ আবাদি জমি। তিনি বলেন, ‘এবার কপালোত কী আছে, জানি না। তারপরও বালুর বস্তা প্রস্তুত আছে।’

সিরাজুল ইসলামেরও দেড় একর জমি গত কয়েক বছরের বন্যায় ভেঙে গেছে। এখন রয়েছে ৪০ শতাংশ জমি। তিনি বলেন, ‘নদীর পানি বাড়ে, ফির কমে। এই বাড়া-কমা হওয়ায় বাঁধের পাড়ে নদীর পানি ধাক্কা লাগে। ফলে ভাঙন দেখা দেয়।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মনোয়ার হোসেন বলেন, গত বছর স্থানীয় লোকজন চাঁদা তুলে এক হাজার ফুট দীর্ঘ একটি মাটির বাঁধ নির্মাণ করেন। গত সোমবার নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সেই বাঁধের প্রস্থে ১০০ ফুট অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাঁধটি ভেঙে গেলে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, তিন শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, ঘরবাড়ি, আবাদি জমি তিস্তায় বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, এই এলাকার বাঁধ রক্ষায় ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার বালুর বস্তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি কমেছে

উত্তরের নদীবিধৌত জেলা গাইবান্ধায় সব কটি নদ-নদীর পানি কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালী পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদের পানি জেলা শহরে নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমেছে। গত রোববার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ পরিমাণ পানি কমে।

পানি কমতে শুরু করায় চরের নিম্নাঞ্চল থেকেও পানি নেমে যাচ্ছে। বিশেষত নদী তীরবর্তী সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলের নিচু এলাকা, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট আগের মতো দৃশ্যমান হচ্ছে।

দুপুরে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক মুঠোফোনে বলেন, জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি কমেছে। দুপুর ১২টায় সব কটি নদীর পানিই বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এদিকে পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার ভাঙন শুরু হয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার খারজানি ও কুন্দেরপাড়া গ্রামে ভাঙন অব্যাহত আছে। গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ভাঙন রোধে নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.