চার দিন ধরে তীব্র ঠান্ডায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণের জেলাগুলোর জীবনযাত্রা থমকে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ৯টায় বরিশালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এই তীব্র শীতে বেশি ভুগছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষেরা। দিনের বেলা ঘন কুয়াশায় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় শ্রমজীবীদের আয়ে টান পড়েছে। সন্ধ্যার পর প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন ছিন্নমূল ও বস্তিবাসী।
আজ রাত আটটার দিকে নগরের মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্টিমারঘাট, সিটি মার্কেট ও নদীবন্দর এলাকায় দেখা যায়, শীত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ রাস্তার পাশে, খোলা স্থানে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করার চেষ্টা করছেন। নদীবন্দরে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষ বন্দরের মেঝেতে আশ্রয় নিয়ে কনকনে শীতে কাঁপছেন।
ষাটোর্ধ্ব গণি মিয়ার (৬৫) একসময় বাড়ি ছিল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন এলাকায়। নদীভাঙনে ভিটেবাড়ি হারিয়ে তিনি এখন ছিন্নমূল। স্ত্রী জাহানারা বেগমকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নদীবন্দরে। এখানে চেয়েচিন্তে সামান্য আয় হয়, তা দিয়ে দুবেলা আহার জোটান। গণি মিয়া বলেন, ‘শীতে খুব কষ্ট পাইতে লাগছি। একটা কম্বলও পাই নাই। ছেঁড়া-পাতলা একটা খ্যাতা (কাঁথা) দিয়ে শীত মানে না। রাইতে ঘুমাইতে পারি না।’
পাশেই দুলাল মিস্ত্রি (৫৫) নামের এক ব্যক্তি পাতলা একটা কম্বল মুড়ি দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই নিচে সিমেন্টের মেঝে। তার ওপরে পাতলা কম্বল গায়ে দিয়ে শীত মানবে কীভাবে?’
দুলাল মিস্ত্রি আগে ঢাকায় রঙের মিলে কাজ করতেন। শারীরিক অসুস্থতা আর চাকরি করার সামর্থ্য না থাকায় বরিশালে ফিরে এখন দিনমজুরের কাজ করেন। রাতে থাকেন নদীবন্দর অথবা হাসপাতালের বারান্দায়। দুলাল মিস্ত্রির বাড়ি ছিল সদরের সাহেবেরজাট এলাকায়। কিন্তু নদীভাঙনে বাড়ি বিলীন হেয়ে যাওয়ায় স্ত্রী থাকছেন ঝালকাঠিতে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। আর তিনি দিনে যে কাজ পান, তা দিয়ে দিন চালান।
গণি মিয়া, দুলাল মিস্ত্রির মতো এ রকম অনেক ছিন্নমূল শীতার্ত নারী-পুরুষকে নদীবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়। নদীবন্দর থেকে ফেরার পথে এক বৃদ্ধকে দেখা যায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। তিনি ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছেন। তিনি কাঁপতে কাঁপতে বলছিলেন, ‘বাবা, এত্ত শীত যে এইবার মনে অয় আর বাঁচমু না। একটা কম্বল কি মোরে দেওন যায়?’
বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ রাতে বলেন, আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বরিশালে। এই অবস্থা আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি বলেন, এর আগে ২০২১ সালের শীত মৌসুমে বরিশালের তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রিতে নেমেছিল।