বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে পুরোপুরি প্রস্তুতি ছাড়াই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হওয়া রোগী অস্ত্রোপচারের জন্য আনা হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে। চিকিৎসক ও নার্স আনা হয়েছে ধার করে। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে হাসপাতাল উদ্বোধন করায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল বুধবার সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ (ইনডোর) চালু করতে মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রী সশরীর না এসে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। তবে অসুস্থতার কারণে তিনি সশরীর উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানান। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে ইনডোর উদ্বোধনের ঘোষণা শোনা যায়নি। কে উদ্বোধন করেছেন, অনুষ্ঠানে তা-ও বলা হয়নি। কবে নাগাদ হাসপাতালে সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে, সেটিও বলা হয়নি।
১ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম উদ্বোধন করেন গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর। তখন হাসপাতালে সেবা চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। একই বছর অক্টোবরে হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালুর ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তখনো হাসপাতালের সেবা পুরোপুরি চালু হয়নি। হাসপাতালের সেবা পুরোপুরি চালু করতে ১ হাজার ৮০২ জন চিকিৎসক ও নার্সের প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩০০ জন।
গতকাল প্রথম দিন হাসপাতালের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগ পাঁচটি অস্ত্রোপচার করা হয়। যাঁদের সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়া রোগী। শুধু অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁদের এই বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
হাসপাতাল পরিচালনার জন্য এখনো জনবল নিয়োগ দিতে পারিনি। দুই হাজারের মতো জনবল লাগবে। আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চাপের কারণে এর আগে গত ২৫ জুন হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ চালুর ঘোষণা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেদিন চালু করতে পারেনি। দিন পরিবর্তন করে গতকাল প্রস্তুতি ছাড়াই আবার অন্তর্বিভাগ চালু করা হয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৫০০ জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কণ্ঠেও ছিল আক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল পরিচালনার জন্য এখনো জনবল নিয়োগ দিতে পারিনি। দুই হাজারের মতো জনবল লাগবে। আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যত তাড়াতাড়ি সেবা চালুর চেষ্টা করছেন, যন্ত্রপাতির অভাবে ততটা পারেননি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও ভবনই বড় কিছু না। এগুলো জনগণের কোনো কাজে আসে না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে বড় বিষয় হলো রোগীদের সেবা। সাধারণ মানুষ যদি সেবা পায়, তাহলেই ভবন-যন্ত্রপাতির সার্থকতা।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয় কী চায় বুঝি না। আগেও দেখেছি, প্রস্তুতি না নিয়েই হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভুল চিকিৎসা হলে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। আমরা দুঃখ প্রকাশ করি। তবু কিছু গোষ্ঠী আছে, যারা তাদের ব্যবসার জন্য নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে।’
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসকদের যাতে কোনো ভুল না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। রোগীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা এবং রোগীদের সময় দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ টিটো মিয়া, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন উপস্থিত ছিলেন।
পুরোপুরি প্রস্তুতি ছাড়াই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয় কী চায় বুঝি না। আগেও দেখেছি, প্রস্তুতি না নিয়েই হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যায়নি। যতটুকু জানি, এ হাসপাতালের জন্য অনেক যন্ত্রপাতি এসেছে। কিন্তু সেগুলো সংযোজন করা হয়নি। ব্যবহৃত না হওয়ায় এগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে সেবা পেতে বড় সমস্যা হতে পারে। জনবলও প্রস্তুত নয়। সব মিলে একটা জগাখিচুড়ি অবস্থা তৈরি হয়েছে।’