পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর বোরহান। এই চরে সরকারি জমি পেয়ে সেখানে বসবাস করছিলেন ৭০ বছর বয়সী রহিমজান বিবি। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর একাই থাকেন। ছোট ঝুপড়িঘরে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করেই তাঁর বসবাস।
ঘূর্ণিঝড় মোখার বিষয়ে গতকাল শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) সদস্যরা সতর্ক করে মাইকিং ও মহাবিপৎসংকেতের কথা জানান। এতে শুক্রবার সারা রাত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটে রহিমজান বিবিসহ অন্যদের। আজ শনিবার সকালে সিপিপির সদস্যরা চর বোরহান থেকে বৃদ্ধ নারী ও শিশুদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। এ সময় রহিমজানও তাঁদের সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে ছোটেন। এর আগে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় কখনো গাছ ধরে, আবার কখনো আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলেন রহিমজান।
মুঠোফোনে রহিমজান বলেন, তাঁর স্বামী নেই। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে, তারা এখন শ্বশুরবাড়িতে। এখানে তাঁকে দেখার মতো কেউ নেই। তাই আগেভাগেই নিরাপদ স্থান চলে যাচ্ছেন।
৭৫ বছর বয়সী চর বোরহানের বাসিন্দা জসীম সরদার পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী। তিনিও স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তার নিরাপদে যাওয়ার জন্য ট্রলারে উঠেছেন।
দশমিনা উপজেলার নবগঠিত ইউনিয়ন চর বোরহান। এ ইউনিয়নে নেই অবকাঠামো। এখানে ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য রয়েছে মাত্র তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মাত্র দুই হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার সক্ষমতা আছে।
দশমিনার সিপিপি সমন্বয়কারী রায়হান বাদল বলেন, দশমিনা দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। এখানে আটটির মতো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রয়েছে, সেখানে মানুষের বসতি রয়েছে। তেঁতুলিয়া নদীতে জেগে ওঠা এসব চর থেকে মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়ের জন্য মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছেন তাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা। শুক্রবার রাতেই মাইকিং করে ঘূর্ণিঝড় মোখা সম্পর্কে মানুষকে জানিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। আজ সকাল থেকে ট্রলারে করে চর থেকে দশমিনা মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা হচ্ছে।
সিপিপি, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চর বোরহানের পাশাপাশি চর শাহজালাল, চর হাদী, চর বাঁশবাড়িয়া, চর ফাতেমা—পাঁচটি চরে অন্তত ১৫ হাজারের মতো মানুষের বসবাস। চরে যে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। আবার চর ফাতেমায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। তেঁতুলিয়া নদী ক্রমশ উত্তাল হয়ে উঠছে। এ কারণে আগেভাগেই লোকজন সরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মানুষকে মূল ভূখণ্ড দশমিনায় নিয়ে আসা হয়েছে। দশমিনার সাতটি ইউনিয়ন ও বাউফল উপজেলার দুটি ইউনিয়নসহ মোট ৯টি ইউনিয়নে সিপিপির ১ হাজার ৫৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনদের নিরাপদে আনা হচ্ছে।
দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বরত) মো. আল মামুন বলেন, বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল থেকে নারী, শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হচ্ছে। দশমিনায় ৬৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মানুষকে নিরাপদ স্থানে আনার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকেরা মাঠে কাজ করছেন।
 
            

















