রাজধানীসহ দেশের মহানগরগুলোতে গতকাল শনিবার শান্তি সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা দলীয় নেতাকর্মীকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
গতকাল সরকারের পতনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে বিএনপি ও তার মিত্ররা ঢাকাসহ দেশের মহানগরের থানায় থানায় পদযাত্রা করে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শান্তি সমাবেশ করে ক্ষমতাসীনরাও মাঠে ছিল। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে রাজপাড়া থানা আওয়ামী লীগ, সিলেট নগরীর কুমারপাড়া পয়েন্টে এবং রংপুর মহানগরে মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে।
রাজধানীর সব থানায় বিক্ষোভ মিছিল ছাড়াও ১০টি স্থানে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে চারটি সমাবেশ হয় ঢাকা মহানগর উত্তরের মোহাম্মদপুর টাউন হল, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর, মধ্য বাড্ডা ও উত্তরার আমিন কমপ্লেক্সের সামনে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, শ্যামপুর রেলগেট, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, ঢাকেশ্বরী বালুর মাঠ, মুগদা স্টেডিয়াম ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে সমাবেশ হয়। এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি নগর নেতাদের সরব উপস্থিতি ছিল।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, সরকারবিরোধীদের ক্ষমতা ভাগাভাগির স্বপ্ন পূরণ হবে না। সংবিধানবিরোধী কোনো দাবি আমরা মেনে নেব না। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুস সাত্তার মাসুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাঈদ খোকনসহ মহানগর নেতারা বক্তব্য দেন।
মোহাম্মদপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বিএনপির উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন ছাড়া সরকার উৎখাত করা যাবে না। নির্বাচনই ক্ষমতা বদলের একমাত্র পথ। ষড়যন্ত্র ছেড়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবাহান গোলাপ, মহানগর উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমান, স্থানীয় এমপি সাদেক খান, আজিজুল হক রানা, আব্দুল আওয়াল শেখ, আলেয়া সারোয়ার ডেইজি প্রমুখ। পরে নেতাকর্মী শান্তি মিছিল করেন।
ডেমরায় সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না। রাজপথে থেকে নেতাকর্মী এ অপচেষ্টা প্রতিহত করবে। ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান মাসুদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন মিসবাহুর রহামান ভূঁইয়া রতন, গোলাম সারোয়ার কবির, সালাউদ্দিন বাদল, রোকসানা ইসলাম চামেলী, মাসুদুর রহমান মোল্লা বাবুল, মাহমুদুল হাসান পলিন, সহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বরে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, মানুষের জীবনের স্বাভাবিক শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের। এ জন্য এ কর্মসূচিকে তিনি রাজনৈতিক না বলে সন্ত্রাসবিরোধী আখ্যা দেন। সমাবেশে দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামছুন্নাহার চাপা ও ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বক্তব্য দেন।
উত্তরায় সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। এ সময় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসান, মতিউর রহমান মতি, শবনম জাহান শীলা প্রমুখ।
বাড্ডায় সমাবেশে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নির্লজ্জের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করছে। এ দেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। সমাবেশে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, কাদের খান, বশিরউদ্দিন আহমেদ, আবুল কাসেম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, নির্বাচন ভন্ডুলে বিএনপি নানা ষড়যন্ত্র করছে। দলটির নেতা তারেক রহমান লন্ডনে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন। রাজাকারের ছেলেরা এখন বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, গণমাধ্যম খুললেই বকবকানি শোনা যায়। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে, বিএনপি যত কথা বলবে, ততই আমাদের ভালো।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল আমিন রুহুলের সভাপিত্বে আরও বক্তব্য দেন হুমায়ুন কবির, ঢাকা-১০ আসনের এমপি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, তাহমিনা সুলতানা, মোজাম্মেল হক হেলাল, শাহজাহান ভূঁইয়া মাখন প্রমুখ।
এ ছাড়া ঢাকেশ্বরী বালুর মাঠে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির; যাত্রাবাড়ীর সমাবেশে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশসম্পাদক দেলোয়ার হোসেন এবং শ্যামপুর রেলগেটে শান্তি সমাবেশে কেন্দ্রীয় সদস্য সানজিদা খানম বক্তব্য দেন।