সুযোগ পেলেও মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটছিল সিরাজগঞ্জের দুই মেধাবী শিক্ষার্থী নুর ইসলাম ও ইশা খাতুনের। এ–সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত হলে তাঁদের সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে বেসরকারি সংস্থা ‘পারি ফাউন্ডেশন’। সংস্থাটি নুর, ইশার ভর্তিসহ পড়াশোনার খরচের সব দায়িত্ব নিয়েছে।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকা অনুযায়ী, ২১৯৭তম হয়ে পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ইশা খাতুন। এ ছাড়া নুর ইসলাম ৩০১৪তম হয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে। নুর ইসলাম সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার রায় দৌলতপুর ইউনিয়নের গোপালপুর বাঁশতলা গ্রামের মোসলেম খান ও নাসিমা বেগম দম্পতির ছেলে। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দবাদ ইউনিয়নের খিদির গ্রামের ইনাম আলী ও শান্তি বেগম দম্পতির মেয়ে ইশা খাতুন।
গত ২০ ও ২৩ মার্চ অনলাইনে মেধাবী নুর ও ইশার মেডিকেল কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার সংবাদ প্রকাশিত হয়।
২৫ ও ৩০ মার্চ পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে পারি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নুর ও ইশাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পারি ফাউন্ডেশনের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জিদ হাসান বলেন, ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নুর ও ইশাকে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই টাকা দিয়ে তাঁরা ইতিমধ্যে ভর্তির কাজ সম্পন্ন করেছেন। সে সঙ্গে তাঁদের মেডিকেলের শিক্ষাসামগ্রীসহ এমবিবিএস পাস করা পর্যন্ত আনুষঙ্গিক সব খরচ বহন করবে পারি ফাউন্ডেশন।
খুলনার দিঘলিয়ার স্টার জুট মিলস উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন নুর। এরপর সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের সরকারি হাজি কোরপ আলী মেমোরিয়াল কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। নিজে টিউশনি করে, কখনো অন্যের জমিতে কাজ করে এ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।
নুর বলেন, ‘প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের পর পারি ফাউন্ডেশন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য প্রথম আলো ও পারি ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সে সঙ্গে দেশের মানুষের কাছে দোয়া চাই, যেন মানবিক চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষকে সব সময় সেবা দিতে পারি।’
এদিকে ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ইশা খাতুনের। সংসারে অভাব থাকলেও সেই স্বপ্নপূরণে পিছপা হননি। বাবার সহায়তা আর মাঝেমধ্যে নিজে টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। সাফল্যও পেয়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
দুই বোনের মধ্যে ইশা বড়। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি ও সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন। ইশার বাবা ইনাম আলী সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা চালান।
ইশা বলেন, ‘প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের পর আমার স্বপ্ন পূরণের পথটি সুগম হয়েছে। পারি ফাউন্ডেশন আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি যেন একজন ভালো চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারি, সেই কামনা করছি।’