এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা: কর্তৃপক্ষের এমন খামখেয়ালিপনা কেন

0
109
ফাইল ছবি

যাঁদের সামান্যতম ভাষাজ্ঞান আছে, তাঁরা একমত হবেন যে ২ নম্বর শর্তের তৃতীয় লাইনটি সঠিক হলে এ বছর কেউ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। কেননা, এসএসসি পরীক্ষা প্রথমে হয়, তারপর এইচএসসি পরীক্ষা হয়। সুতরাং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার দুই শিক্ষাবর্ষের মধ্যে এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় পাস করা অসম্ভব; বরং এসএসসি/সমমান পরীক্ষার দুই শিক্ষাবর্ষের মধ্যে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় পাস করাই সম্ভব; অর্থাৎ দ্বিতীয় শর্তের শেষ লাইনটি কোনো বোধগম্য ভাষা নয়।

ভাষার মাসে প্রচারিত প্রজ্ঞাপনে ভাষার প্রতি এই অবহেলাকে ‘টাইপিং ইরোর’ ধরে নিয়ে যদি শর্তটাকে বোঝার চেষ্টা করি, তবে অর্থ দাঁড়ায়, বিগত সালগুলো পর্যন্ত সদ্য গত এইচএসসি পরীক্ষায় যাঁরা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে পাস করেছেন এবং ভর্তি পরীক্ষার অন্যান্য শর্ত পূরণ করেছেন, তাঁদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যে নিয়ম বহু বছর ধরে বলবৎ ছিল, তা করোনার মতো মহামারির সময় তুলে নেওয়া হয়েছে! এ বছর কর্তৃপক্ষ ‘সেকেন্ড টাইমার’দের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখলেও ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে।

প্রায় ৩০ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় এটা আমার অজানা নয় যে ভর্তি পরীক্ষার শর্ত বিভিন্ন যৌক্তিক-অযৌক্তিক কারণে প্রায় প্রতিবছরই বদলানো হয়ে থাকে। একই সঙ্গে এটাও আমার অজানা নয় যে আমাদের দেশসহ বিশ্বের কোনো কোনো জনবহুল দেশে ভর্তি পরীক্ষা মেধা যাচাইয়ের সনদ নয়, এটি একটি ‘ইলিমিনেশন প্রসেস’। সব যোগ্য ভর্তি-ইচ্ছুক প্রার্থীর তুলনায় প্রকৃত আসনসংখ্যা অতি নগণ্য হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষায় যোগ্যতার পাশাপাশি কিছু অযাচিত শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় কেবল আবেদনকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। যেমন জীববিজ্ঞান ও রসায়নে সম্যক জ্ঞানসহ ভাষাজ্ঞান, পদার্থ, গণিতে ন্যূনতম জ্ঞানই চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধ্যয়নের বিশ্বস্বীকৃত যোগ্যতা।

আমাদের দেশে এ রকম যোগ্যতাসম্পন্ন কয়েক লাখ ভর্তি-ইচ্ছুর বিপরীতে আসনসংখ্যা কয়েক হাজার। এই বাস্তবতায় কর্তৃপক্ষের পক্ষে একসঙ্গে যতজনের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সক্ষমতা আছে, তার ওপর নির্ভর করে ভর্তি পরীক্ষার শর্ত নির্ধারণ করা হয়, যা অবৈজ্ঞানিক হলেও বাস্তবতার নিরিখে এবং বিকল্প কোনো পদ্ধতি না থাকায় সবাই বহু বছর ধরেই মেনে নিয়েছেন। প্রতিবছর ভর্তির শর্ত এ কারণেই পরিবর্তিত হয়ে থাকে।

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে কেন?

এ বছর নতুন আরোপিত শর্তের কারণে সর্বোচ্চ কয়েক শ আবেদনকারী বাদ পড়বেন, যা মোট অংশগ্রহণকারীর তুলনায় নগণ্য; অর্থাৎ যে কারণে শর্ত আরোপ, তা পূরণে এই শর্ত কোনো ভূমিকাই রাখবে না। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো, এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিশ্বব্যাপী সংঘটিত করোনা মহামারিকে অগ্রাহ্য করেছেন, যা আন্তর্জাতিক ও দেশে গৃহীত নীতিমালার চরম লঙ্ঘন।

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার ছোবলে সব কর্মকাণ্ড যে বন্ধ ছিল, তা তাঁরা অস্বীকার করেছেন। ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রেণিকক্ষে ক্লাস-পরীক্ষা থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন, তা তাঁরা ভুলে গেছেন। সরকারের ২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে মাত্র তিনটি বিষয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া ও ২০২২ সালের মার্চের স্থলে ডিসেম্বরে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতাকে এই ভর্তি পরীক্ষার নীতিনির্ধারকেরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। ২০২১ সালে কোনো এইচএসসি পরীক্ষার্থীর নিজ বা পরিবারের কোনো এক বা একাধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে বা ফলাফল বিপর্যয় ঘটলে ২০২২ সালে অনিয়মিত হিসেবে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার গ্রহণযোগ্য বিষয়টিকে এই শর্তের মাধ্যমে অস্বীকার করা হয়েছে।

আবেদনের সময় নতুন আরোপিতে ওই অস্পষ্ট শর্ত পূরণ না হলে তা আবেদনকারীর নজরে আনার বদলে আবেদনপত্র গ্রহণ করে ইউজার আইডি দেওয়া হয়েছে ভর্তি পরীক্ষার নির্ধারিত অর্থ জমা দেওয়ার জন্য। প্রদত্ত ইউজার আইডি ব্যবহার করে আবেদনকারীরা যথারীতি অর্থ প্রেরণের পর প্রবেশপত্র ডাউনলোডের জন্য নির্ধারিত মুঠোফোনে এসএমএসর মাধ্যমে পাসওয়ার্ড পেয়েছে। যদিও অন্য যেকোনো শর্ত পূরণ না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনপ্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

পরীক্ষার মাত্র চার দিন আগে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে গেলে জানানো হলো অর্থ গ্রহণের পরও শর্ত পূরণ না করায় আবেদনকারী পরীক্ষা দিতে পারবেন না! এটা কি প্রতারণা নয়? মনে রাখা প্রয়োজন, এই চার দিনের এক দিন সরকারি ছুটি। এটাকে নীতিনৈতিকতা ও বাস্তবতাবিবর্জিত সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করা হলে তা কি ভুল বলা হবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.