বাতাসে নববর্ষের সুর

0
109
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণের প্রস্তুতি।

চারদিকে বইছে চৈত্রের তাপদাহ। ঘরে-বাইরে সবখানেই তীব্র দহন। মধ্যদুপুরে আকাশে সূর্যের তেজ আরও প্রকট। তবে বিকেল আসতেই প্রকৃতি কোমল। ভোরে সবুজ পাতার ছন্দে মৃদুমন্দ বাতাস। সে বাতাসে ভেসে আসছে নতুনের বারতা। দুয়ারে সমাগত বাঙালির প্রিয় বৈশাখ। আর মাত্র চার দিন পরই নতুন বছর ১৪৩০। কান পাতলেই শোনা যায় বাঙালির সর্বজনীন উৎসবের বিপুল প্রস্তুতি। পুরোনো বছরের দুঃখ, ক্লেশ, মলিনতা ঝেড়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আকুতি।

১৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে আবর্তিত করে প্রাণের উৎসবে মাতবে বাঙালি। এখন চলছে তারই আয়োজন। গতকাল শনিবার চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা যায়, প্রস্তুতির মহাকর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে জলরং-অ্যাক্রিলিকে বিভিন্ন আকার ও রকমের চিত্রকর্ম আঁকছেন তাঁরা। এবার উৎসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চারুকলার ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে শিল্পী, কলাকুশলী এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হয়েছেন।

জয়নুল গ্যালারির ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল বাংলার লোকজ আবহের আবেদনময়ী বাঘ-সিংহ-হাতি-পেঁচাসহ নানা মুখোশে রং করতে ব্যস্ত একদল শিক্ষার্থী। পাশেই আরেকদল শিক্ষার্থী ব্যস্ত সরাচিত্র নিয়ে। মাটির সরায় নানা রঙে কেউ ফুটিয়ে তুলছেন মাছ-ময়ূর-পাখির মুখ, কেউবা আঁকছেন ফুল-লতাপাতাসহ নানা মোটিফ। বাইরে বানানো হচ্ছে প্রধান মোটিফ।

জয়নুল গ্যালারির আরেকপাশে বিক্রি হচ্ছে তৈরি করা নানা মোটিফ। কাজের ধরন অনুযায়ী এই শিল্পকর্মের দাম নির্ধারণ করা হয়। এসব বিক্রি করে মঙ্গল শোভাযাত্রার খরচ বহন করা হয়। আঁকিয়েরা জানালেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য এবার ছয়টি মোটিফ তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলো হলো– মায়ের কোলে শিশু, নীলগাই, টেপা পুতুল, বাঘ, ময়ূর, ভেড়া ও হরিণ।

মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ওম প্রকাশ বলেন, এবার প্রধান মোটিফ থাকবে মায়ের কোলে শিশু ও নীলগাই। মায়ের কোলে শিশুর প্রতীকীভাবে শান্তির বার্তা দিতে চেয়েছি। এ ছাড়া আমাদের যেসব প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে, তাদের তুলে ধরতে নীলগাই নির্ধারণ হয়েছে। আরও একটি মোটিফ করার কথা আমরা ভাবছি। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমরা বড় মোটিফগুলোর কাঠামো দাঁড় করিয়ে ফেলেছি। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাজ সম্পন্ন হবে। শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো চলছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় গানের কলির প্রথম পঙ্‌ক্তি ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ নির্ধারিত হয়েছে এবারের প্রতিপাদ্য। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে চারুকলার ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, প্রতিবছর আমরা বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই প্রতিপাদ্য ঠিক করি। এবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও চরম ধস নেমেছে। তাই আমাদের এবারের কামনা– পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসুক।

এদিকে উদযাপন কেন্দ্রীয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরের জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.