ছবির মতো পরিপাটি ব্রহ্মপুত্র পাড়ের জয়নুল সংগ্রহশালা

0
127
জয়নুল আবেদিনের আঁকা বিভিন্ন চিত্রকর্ম ঘুরে ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। গত রোববার সকালে ময়মনসিংহ নগরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায়

পাশ দিয়ে বয়ে চলছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নদের পাড়ে শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে বিশাল বিশাল গাছ। গাছের ছায়া এতটাই ঘন, সেখানে সূর্যের উত্তাপ ছড়ায় না। এমন ঘন সবুজের মাঝখানে একটি দ্বিতল ভবন। ভবনটি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে যেন ধরে রেখেছে পরম যত্নে। ভেতরে সাজানো রয়েছে শিল্পাচার্যের আঁকা বিখ্যাত ছবি ও তাঁর বহু স্মৃতির নিদর্শন।

ময়মনসিংহ নগরের জিরো পয়েন্ট থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় লাগোয়া সড়কে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দূরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার অবস্থান।

জেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেন, জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেড়ে উঠেছিলেন ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে। নদের পাড় শিল্পীর শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। জয়নুল আবেদিন এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রায়ই সেখানে যেতেন এবং বসে ছবি আঁকতেন। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে বাংলা ১৩৮২ সন (১৯৭৫ সালে) বাংলাদেশের তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন করেন। দীর্ঘদিন এটি ময়মনসিংহের স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে সংগ্রহশালাটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে।

গত রোববার সংগ্রহশালা ঘুরে দেখা যায়, দ্বিতল ভবনটির নিচতলায় চলে দাপ্তরিক কার্যক্রম। ওপরের তলায় দুটি গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে শিল্পীর আঁকা মোট ৬২টি ছবি ও ১২৭টি ব্যক্তিগত স্মৃতি নিদর্শন। দুটি গ্যালারি পরিপাটিভাবে সাজানো।

জয়নুল সংগ্রহশালার উপকিপার মুকুল দত্ত জানান, সাধারণ মানুষ ২০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে এ সংগ্রহশালা ঘুরে দেখতে পারবেন। বিদেশি অতিথিদের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ৩০০ টাকা এবং অন্য যেকোনো দেশের পর্যটকদের জন্য ৫০০ টাকা মূল্যের টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। রোববার থেকে বুধবার প্রতিদিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। শুক্রবার খোলা থাকে বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। শনিবার ও সরকারি অন্যান্য ছুটির দিনে জাদুঘর বন্ধ থাকে।

সংগ্রহশালার দুটি গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গ্যালারি দুটির মধ্যে প্রথম গ্যালারিতে রয়েছে ‘মনপুরা ৭০’সহ জয়নুলের আঁকা মোট ২৯টি শিল্পকর্ম। এ গ্যালারিতে রয়েছে শিল্পীর ছবি আঁকার বিভিন্ন সরঞ্জামসহ মোট ৮৬টি ব্যক্তিগত স্মৃতি নিদর্শন। দ্বিতীয় গ্যালারিতে রয়েছে ‘দুর্ভিক্ষ’ শিরোনামে আঁকা চারটি ছবিসহ মোট ৩৩টি শিল্পকর্ম। এ গ্যালারিতে শিল্পীর পরিধানের বিভিন্ন পোশাকসহ মোট ৪১টি স্মৃতি নিদর্শন।

সংগ্রহশালা সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছরে এখানে শিল্পীর ব্যক্তিগত ব্যবহারের আরও কিছু জিনিস সংযোজিত হয়েছে। এগুলো শিল্পীর সহধর্মিণী জাহানারা আবেদিন ও ছেলে মঈনুল আবেদিন সংগ্রহশালায় দান করেছেন। দুটি গ্যালারিতে স্থাপন করা হয়েছে টেলিভিশন। যেখানে সারাক্ষণ চলে শিল্পীর জীবন ও শিল্পকর্মের ওপর নানা বর্ণনা। ভবিষ্যতে প্রতিটি শিল্পকর্মের পাশে অডিও যুক্ত করার কাজ চলছে। এতে প্রদর্শিত ছবির পাশে থাকবে হেডফোন। দর্শনার্থী চাইলে হেডফোন কানে লাগিয়ে প্রতিটি ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।

সংগ্রহশালা সূত্রে আরও জানা যায়, সংগ্রহশালাটি দেখতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জন  আসেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ দর্শনার্থী আসেন ময়মনসিংহ জেলার বাইরে থেকে। গত রোববার সংগ্রহশালা দেখতে আসা দর্শনার্থী লিপন কুমার সোম বলেন, তিনি রাজবাড়ি জেলা থেকে এসেছেন। তাঁর অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল জয়নুল আবেদিনের এ সংগ্রহশালা দেখার। সবকিছু খুব পরিপাটিভাবে সাজানো দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ জানায়, সংগ্রহশালার উদ্যোগে ১৫০ জন শিশু ও কিশোরকে ছবি আঁকা শেখানো হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেল ও শুক্রবার সকালে শিশু-কিশোরেরা এখনে ছবি আঁকা শেখে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও জয়নুলের জন্মদিনে ওই শিশু-কিশোরদের জন্য আয়োজন করা হয় ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা।

মুকুল দত্ত বলেন, ‘আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি সংগ্রহশালাটি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে। শিল্পীর আঁকা ছবি ও স্মৃতি নিদর্শনগুলো আমরা যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করছি। পাশাপাশি প্রতিনিয়তই চাই এখনে বেড়াতে এসে দর্শনার্থীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। দিনে দিনে সংগ্রহশালাটির আধুনিকায়ন করার কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.