চীন, সৌদি ও তুরস্ক ছাড়াই কাশ্মীরে জি–২০ সম্মেলন শুরু

0
140
জি–২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সোমবার শ্রীনগরে এ সম্মেলনে শুরু হয়েছে, ছবি: এএফপি

পর্যটনকে কেন্দ্র করে জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি, সুস্থিতি ও কর্মসংস্থানের পরিবেশ ফিরে আসবে। জি–২০ সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্যই তা। আজ সোমবার জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে জি–২০ দেশের প্রতিনিধিদের এ কথা বলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং। তিনি বলেন, পর্যটনের বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেবে হিন্দি সিনেমা। তাঁর কথা, কাশ্মীর যে বদলে গেছে, ভয়ের বাতাবরণ কেটে গেছে, তার প্রমাণ জি–২০ দেশের পর্যটনসংক্রান্ত এই সম্মেলন। আন্তর্জাতিক এই গোষ্ঠীর তিন দিনের পর্যটন সম্মেলন সোমবার শুরু হয়। চলবে বুধবার পর্যন্ত।

তবে এ সম্মেলন ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক শুরু থেকেই। পাকিস্তান সব সময় চেয়েছে ‘বিতর্কিত’ কাশ্মীরে যাতে জি–২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হয়। সে জন্য তারা চীন, তুরস্ক, সৌদি আরব, মিসরসহ বিভিন্ন দেশকে প্রভাবিত করতে চেয়েছে।

ভারতে এসসিও সম্মেলনে এসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জরদারিও এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে তারা কিছুটা সফল। কারণ, চীন, সৌদি আরব ও তুরস্ক তাদের সুরে সুর মিলিয়েছে। ভারত যদিও তাদের অনুপস্থিতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ভারতের বক্তব্য, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ভারতে নিজের দেশের যেকোনো স্থানে সম্মেলন করার অধিকারী।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে গোষ্ঠীভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা সোমবার শ্রীনগরে এসে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাঁদের স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী জি কিষেন রেড্ডি ও জি–২০ শেরপা অমিতাভ কান্ত। প্রায় ৬০ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। সদস্যদেশের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ভারত সরকার বিশেষ আমন্ত্রিত দেশের প্রতিনিধিদেরও শ্রীনগরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ বিশেষ আমন্ত্রিত দেশ। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান এ সম্মেলনে যোগ দিতে শ্রীনগরে উপস্থিত হয়েছেন।

ভারতের নীতি আয়োগের সাবেক কর্তা বর্তমানে জি–২০ শেরপা অমিতাভ কান্ত সোমবার আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের বলেন, এই সম্মেলন কাশ্মীরের মানুষের মনে এক প্রবল আশা ও ভরসার জন্ম দিয়েছে। এত বছরের সন্ত্রাসবাদে বিদীর্ণ তাঁদের জীবনে নতুন আশা সঞ্চারিত হয়েছে। এই সম্মেলন বুঝিয়েছে তাঁরা বিচ্ছিন্ন নন। বরং দেশের সবার মতো এক। জি–২০–এর প্রধান কো-অর্ডিনেটর হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি সব সময় চান, মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়ন ও প্রগতিকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে। কাশ্মীরে এই সম্মেলন করার উদ্দেশ্যও তা–ই।

অমিতাভ কান্ত জানান, সন্ত্রাসবাদের জন্য কাশ্মীরের জনজীবন অন্য রকম হয়ে গিয়েছিল। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ হওয়ার পর থেকে ক্রমেই জনজীবন নতুনভাবে গড়ে উঠছে। মানুষের মনে নতুন আশা জাগছে। পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, একটা সময় কাশ্মীর ছিল হিন্দি সিনেমার প্রথম পছন্দের স্থান। অথচ সেখানে সিনেমার শুটিং পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নতুন আমলে সরকার সেই কাশ্মীরে শুটিং করার জন্য ৩৭০টি সিনেমাকে অনুমতি দিয়েছে। ফিল্ম পর্যটনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ ও বহুমুখী বিকাশই এই সম্মেলনের লক্ষ্য।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। বাতিল করা হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ। সেই থেকে এই প্রথম কাশ্মীরে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সে জন্য প্রশাসনের পক্ষে থেকে চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখা হয়নি। কাশ্মীর যে স্বাভাবিক ও শান্ত, তা প্রমাণের তাগিদ যতখানি, ততটাই নিশ্ছিদ্র করা হয়েছে নিরাপত্তা।

শ্রীনগরের সুবিশাল ডাল লেকের ধারে শের–ই–কাশ্মীর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে হচ্ছে এ সম্মেলন। গোটা লেকের আশপাশ সাজিয়ে তোলা হয়েছে। লেক নিরাপদ রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মেরিন কমান্ডোদের। ড্রোন মারফত নজরদারি চালানো হচ্ছে সম্মেলনের চারদিকে। জাতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের মোতায়েন করা হয়েছে সর্বত্র। প্রশাসনের লক্ষ্য নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি জনজীবন অব্যাহত রাখা। সবকিছুই স্বাভাবিক এই বোধ প্রতিনিধিদের মধ্যে সঞ্চারিত করা।

নিরাপত্তার স্বার্থে জি–২০ প্রতিনিধিদের কিছু কর্মসূচি অবশ্য কাটছাঁট করা হয়েছে। যেমন পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রতিনিধিদের গুলমার্গে নিয়ে যাওয়া হবে না। শ্রীনগরের অদূরে চিড়িয়াখানায়ও নয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.