রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর পর পশ্চিমাদের অসম্মতি সত্ত্বেও চীন ও রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার অঙ্গীকার করেছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে চীন। এই সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলো হলো আন্তসীমান্ত সংযোগ বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গভীরতা।
রয়টার্স জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার বেইজিংয়ে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে ‘গভীর’ আলোচনা করেছেন রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী। ঠিক এই সময়ে আবার দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নে আলোচনার জন্য মস্কো সফরে গেছেন চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই। এই সফরে কৌশলগত আলোচনার পাশাপাশি এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে আগামী মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেইজিং সফরে যাবেন।
দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কৌশলগত দিকনির্দেশনার মাধ্যমে চীন-রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা আরও গভীর ও দৃঢ় হচ্ছে বলে বেইজিংয়ের এক আলোচনা সভায় মন্তব্য করেছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ প্রায় দুই বছর ধরে চলছে। এই সময়ের মধ্যে মস্কো অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য মিত্র দেশ চীনের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়েছে।
বর্তমানে তেল ও গ্যাসের পাশাপাশি চীনের শস্যের চাহিদাও পূরণ করছে রাশিয়া। চীনের শুল্ক বিভাগের তথ্যানুসারে, গত জুলাই মাসে রাশিয়া থেকে চীনের পণ্য আমদানি ৮ শতাংশ কমলেও আগস্ট মাসে ৩ শতাংশ বেড়েছে। গত মাসে ১১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে চীন।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে পশ্চিমাদের সমালোচনার তোয়াক্কা করছে না চীন। এ ব্যাপারে দেশটি বলছে যে তারা কোনো আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির লঙ্ঘন করেনি, চীন চাইলে যেকোনো দেশকে সহযোগিতা করতে পারে।
গত মঙ্গলবার জি-৭–ভুক্ত দেশের মন্ত্রীরা কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, রাশিয়ার এই আগ্রাসী যুদ্ধে যেকোনো ধরনের সহায়তা বন্ধ করতে হবে; তা না হলে বড় মূল্য দিতে হবে। বর্তমানে চীনের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যের জন্য দেশটির দূর পূর্বাঞ্চলের একটি সীমান্তবর্তী অঞ্চল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
গত সপ্তাহে রাশিয়ার ইউনাইটেড অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কেমিক্যাল কোং ও চীনের জুয়ান ইউয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট এক রেল সেতুর পাশে ট্রান্সশিপমেন্ট অয়েল কমপ্লেক্স নির্মাণের বিষয়ে একমত হয়েছে। এই সেতু রুশ শহর নিঝনেলেনিনস্কোয়েকে চীনের টংজিয়াংয়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রপ্তানির জন্য ইউরোপ–নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে বহুমুখী হওয়ার চেষ্টা করছে রাশিয়া, তার অংশ হিসেবে এই ট্রান্সশিপমেন্ট অয়েল কমপ্লেক্স, অর্থাৎ এটি হবে তেল পরিবহনের কেন্দ্র।
ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পানি সমুদ্রে ছাড়ার পর জাপান থেকে সামুদ্রিক খাবার আমদানি নিষিদ্ধ করেছে চীন। এদিকে রাশিয়ার দূর পূর্ব অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক খাদ্য উৎপাদিত হয়। তাই চীনে রাশিয়ার সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করছে মস্কো।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোও বলছে, বৈশ্বিক খাদ্যঘাটতির কারণে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে শস্য ব্যবসা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। চীনের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রুটির ঝুড়ি হিসেবে খ্যাত হেইলংজিয়াংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার শস্য করিডর নির্মাণ করা হলে চীনের খাদ্য নিরাপত্তা আরও বেশি সুরক্ষিত হবে।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে চীনের প্রধানমন্ত্রী সি চিন পিং বলেন, হেইলংজিয়াং প্রদেশ হওয়া উচিত উত্তরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধান মাধ্যম। এই প্রদেশ জাতীয় প্রতিরক্ষা, খাদ্য ও জ্বালানি সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।